পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৫৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এগারো দূরে নর্মদা বিজন বনপ্রাস্তরের মধ্য দিয়া বহিয়া চলিয়াছে, খুব সকালে ঘোডায় উঠিয়া স্নান করিতে গেলে বেলা নটার মধ্যে ফিরিয়া আসা যায়। দক্ষিণে পর্বতসানুর ঘন বন নিবিড়, জনমানবহীন, রুক্ষ ও গম্ভীব । দিনের শেষে পশ্চিম গগন হইতে অস্ত-সূর্যের আলো পুডিয়া পিছনের পাহাডের যে অংশটা খাড়া ও অনাবৃত, তাহার গ্রানাইটু দেওয়ালটা প্রথমে হয় হলদে, পরে চয় মেটে সিঁদুরের রং, পরে জারদা রঙের হইতে হইতে হঠাৎ ধূসব ও তারপরেই কালো হইয়া যায়। ওদিকে দিগন্তলক্ষ্মীর ললাটে আলোর টিপের মত সন্ধ্যাতারা ফুটিয়া উঠে, অরণ্যানী ঘন অন্ধকাবে ভরিয়া যায়, শাল ও পাহাড়ী বঁাশের ডালপালায় বাতাস লাগিয়া একপ্রকার শব্দ হয়- রামচরিত ও জহুরী সিং বাঘের ভয়ে আগুন জালে, চারিধারে শিয়াল ডাকিতে শুরু করে, বন মোরগ, ডাকে, অন্ধকার আকাশ দেখিতে দেখিতে গ্রহ, তারা, জ্যোতিষ্ক, ছায়াপথ একে একে দেখা দেয়। পৃথিবী, আকাশ-বাতাস অপূর্ব রহস্যভরা নিস্তব্ধতায় ভরিয়া আসে, তঁাবুর পাশের দীর্ঘ ঘাসের বন দুলাইয়া এক একদিন বন্যবরাহ পলাইয়া যায়, দূরে কোথায় হায়েনা উন্মাদেব মত হাসিয়া উঠে, গভীর বাত্রে কৃষ্ণপক্ষের ভাঙা চান্দ পাহাডের পিছন হইতে ধীরে ধীবে উঠতে থাকে, এ যেন সত্যই গল্পেব বইয়ে-পড়া জীবন । এক এক দিন বৈকালে সে ঘোড়ায় চডিয়া বেড়াইতে যায়। শুধুই উচু-নীচু অর্ধশুস্ক তৃণভূমি ; ছোটবড শিলাখণ্ড ছডানো, মাঝে-মাঝে শাল ও বাদাম গাছ । আর এক জাতীয় বড বন্য গাছের কি অপূর্ব আকাবঁকা ডালপালা, চৈত্রের রৌদ্রে পাতা ঝরিয়া গিয়াছে, নীল আকাশের পটভূমিতে পত্রশূন্য ডালপালা যেন ছবির মত দেখা হয়। অপুর তাবু হইতে মাইল-তিনেক দূরে একটা ছোট পাহাড়ী নদী আঁকিয়া বঁাকিয়া গিয়াছে, অপু তাহার নাম বাখিয়াছে বক্রতোয় । গ্রীষ্মকালে জল আদৌ থাকে না, তাহারই ধারে একটা শাল-ঝাডের নিচের একখানা পাথরের উপর সে একদিন গিয়া বসে, ঘোডাটা গাছের ডালে বাধিয়া রাখে-স্থানটা ঠিক ছবির মত। স্বর্ণাভ বালুর উপর অস্তহিত বন্যানদীর উপল-ঢাকা চরণ-চিহ্ন-হাত কয়েক মাত্র প্রশস্ত নদীখাত, উভয় তীরই পাষাণময়, ওপারে কঠিন ও দানাদার কোয়ার্ট জাঁইট ও ফিকে হলদে রঙের বড় বড় পাথরের চাইয়ে ভরা, অতীত কোন হিমু যুগের তুষার নদীর শেষ প্রবাহে ভাসিয়া আসিয়া এখানে হয়ত আটকাইয়া গিয়াছে, সোনালী রংয়ের নদী-বালু হয়ত সুবর্ণরেণু মিশানো, অন্ত-সূর্যের রাঙা আলোয় অত চকু-চক করে কেন নতুবা ? নিকটে সুগন্ধ লতাকন্তুরীর জঙ্গল, খর বৈশাখী রৌদ্রে শুষ্ক গুটিগুলি ফাটিয়া মৃগনাভির গন্ধে অপরাহের ፭ ዓ¢