পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উঠানে মাচাতলায় বিধু জেলেনী দাড়াইয়া মাছ বিক্রয়ের পয়সা তাগাদ করিতেছে। অপু বলিল-দিদিকে খুঁজতে গিয়েছিলাম ঠাকুমা-বকুলতলা থেকে আসতে আসতে ঠাকুমা বলিলেন-দুগগা এই তো বাড়ী গেল । এই কতক্ষণ যাচ্ছেছুটে যা দিকি-বোধ হয় এখনো বাড়ী গিয়ে পৌছয়নি।-- সে এক দৌডে বাউীব দিকে ছুটিল। পিছন হইতে পাটুলির বোন রাজী চেচাইয়া বলিল- কাল সকালে আসিস অপু-আমরা গঙ্গা-যমুনা খেলার নতুন ঘর কেটেচি । ঢোেকশালের পেছনে তিনতলায়-দুগগাকে বলিস তাদের বাড়ীর কাছে আসিয়া পৌছিয়া হঠাৎ সে থমকিয়া দাড়াইয়া গেল-দুৰ্গা আর্তম্বরে চীৎকার করিতে করিতে বাড়ীর দরজা দিয়া দৌড়াইয়া বাহির হইতেছে--পিছনে পিছনে তাহার মা কি একটা হাতে মারিতে মারিতে তাড়া করিয়া ছুটয়া আসিয়াছে! দুৰ্গা গাবতলার পথ দিয়া ছুটয়া পলাইল, মা দরজা হইতে ধাবমান মেয়ের পিছনে চোচাইয়া বলিল-যাও, বেরোওএকেবারে জন্মের মত যাও—আর কক্ষনো বাড়ী যেন ঢুকতে না হয়—বালাই, আপদ চুকে যাকৃ-একেবারে ছাতিমতলায় দিয়ে আসি। ছাতিমতলায় গ্রামের শ্মশান । অপুর সমস্ত শরীর যেন জমিয়া পাথরের মত আড়ষ্ট ও ভারী হইয়া গেল । তাহার মা সবেমাত্র ভিতরের বাড়ীতে ঢুকিয়া মাটির প্রদীপটা রোয়াকের ধার হইতে উঠাইয়া লইতেছে। সে পা টিপিয়া টিপিয়া বাড়ী ঢুকিতেই তাহার মা তাহার দিকে চাহিয়া বলিল—তুমি আবার এতরাত পর্যন্ত কোথায় ছিলে শুনি ? মোটে তো আজ ভাত খেয়েচো ? তাহার মনে নানা প্রশ্ন জাগিতেছিল। দিদি আবার মারা খাইল কেন ? সে এতক্ষণ কোথায় ছিল ? দুপুর বেল দিদি কি খাইল ? সে কি আবার কোন জিনিস চুরি করিয়া আনিয়াছে ? কিন্তু ভয়ে কোন কথা না বলিয়া সে কলের পুতুলের মত মায়ের কথা মত কাজ করিয়া ঘরের মধ্যে চুকিল। পরে ভয়ে ভয়ে প্রদীপ উস্কাইয়া নিজের ছোট বইয়ের দপ্তরটি বাহির করিয়া পড়িতে বসিল । সে পড়ে মোটে তৃতীয় ভাগ-কিন্তু তাহার দপ্তরে দুখানা মোটা মোটা ভারী ইংরাজী কি বই, কবিরাজী ঔষধের তালিকা, একখানা পাতা-ছেড়া দাশুরায়ের পাঁচালী, একখানা ১৩০৩ সালের পুরাতন পাজি প্রভৃতি আছে। সে নানাস্থান হইতে চাহিয়া এগুলি জোগাড় করিয়াছে এবং এগুলি না। পড়িতে পারিলেও রোজ একবার করিয়া খুলিয়া দেখে । খানিকক্ষণ দেওয়ালের দিকে চাহিয়া সে কি ভাবিল। পরে আর একবার ●●