পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৫৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গিরি করিতে পরিবে ? এদিকে পয়সা ফুরাইয়া আসিল ষে ! না করিলেই বা চলে কিসে ? সেখানে থাকিতে এই ছয় বৎসরে যা হইয়াছিল, অপু বোঝে এখানে তা চব্বিশ বৎসরেও হইত না। আর্টের নতুন স্বপ্ন সেইখানে সে দেখিয়াছে। ওখানকার সূর্যাস্তের শেয আলোয়, জনহীন প্রান্তরে, নিস্তব্ধ অরণ্যভূমির মায়ায়, অন্ধকার-ভরা নিশীথ রাত্রির আকাশের নীচে, শালমঞ্জরীর ঘন সুবাসে ভরা দুপুরের রোদে সে জীবনের গভীর রহস্যময় সৌন্দর্যকে জানিয়াছে। কিন্তু কলিকাতার মেসে তাহা তো মনে আসে না-সে। ছবিকে চিন্তায় ও কল্পনায় গড়িয়া তুলিতে গভীরভাবে নির্জন চিন্তার দরকার হয়-সেইটাই তাহার হয় না। এখানকার মেস-জীবনে। সেখানে তাহার নির্জন প্রাণের গভীর, গোপন আকাশে সত্যের যে নক্ষত্রগুলি স্বতঃস্ফুর্ত জ্যোতিস্মান হইয়া দেখা দিয়াছিল, এখানকার তরল জীবনানন্দের পর্ণ জ্যোৎস্নায় হয়ত তাহারা চিরদিনই অপ্রকাশ রহিয়া যাইত । মনে আছে সে ভাবিয়াছিল, ঐ সৌন্দর্যকে, জীবনের ঐ অপূর্ব রূপকে সে যতদিন কালিকলমে বন্দী করিয়া দশজনের চোখের সামনে না ফুটাইতে পরিবে: --ততদিন সে কিছুতেই ক্ষান্ত হইবে না।-- আর একদিন সেখানে সে কি অদ্ভুত শিক্ষাই না পাইয়াছিল। ঘোড়া করিয়া বেড়াইতেছিল । এক জায়গায় বনের ধারে ঝোপের মধ্যে অনেক লতাগাছে গা লুকাইয়া একটা তেলাকুচা গাছ। তেলাকুচা বাংলার ফল —অপরিচিত মহলের একমাত্র পরিচিত বন্ধু, সেখানে দাড়াইয়া গাছটাকে দেখিতে বড় ভাল লাগিতেছিল।--তেলাকুচা লতার পাতাগুলা সব শুকাইয়া গিয়াছে, কেবল অগ্রভাগে ঝুলিতেছিল একটা আধ-পাকা ফল। তারপর দিনের পর দিন সে ঐ লতাটার মৃত্যু-যন্ত্রণ লক্ষ্য করিয়াছে। ফলটা যতই পাকিয়া উঠিতেছে, বেঁটার গোডায় যে অংশ সবুজ ছিল, সেটুকু যতই রাঙা সিঁদুরে রং হইয়া উঠিতেছে, লতাটা, ততই দিন দিন হলদে শীর্ণ হইয়া শুকাইয়া আসিতেছে । W একদিন দেখিল, গাছটা সব শুকাইয়া গিয়াছে, ফলটাও বেঁটা শুকাইয়া গাছে ঝুলিতেছে, তুল-তুলে পাকা, সিঁদুরের মত টুক-টুকে রাঙা-যে কোন পাখি, বনের বানর, কি কাঠবিড়ালীর অতি লোভনীয় আহার্য । যে লতাটা এতদিন ধরিয়া ন’ কোটি মাইল দূরের সূর্য্য হইতে তাপ সংগ্রহ করিয়া, চারিপাশের বায়ুমণ্ডল হইতে উপাদান লইয়া মৃত জড়পদার্থ হইতে এ উপাদেয় খাবার তৈয়ারী করিয়াছে, তাহার জীবনের উদ্দেশ্য শেষ হইয়া গিয়াছে vo a R