পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৬৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাহির হইয়াছিল। সবে শীতকাল শেষ হইয়া রৌদ্র বেজায় চড়িয়াছে, আকাশে বাতাস বনে কেমন গন্ধ । বাবা তাহাকে কত বনের গাছ, পাখি চিনাইয়া দিয়া গিয়াছে, তাই সে জানে কোথায় বনমরিচার লতায় থোকা থোকা সুগন্ধ-ফুল ধরিয়াছে, কেলেকেঁাডার লতার কচি ডগা ঝোপের মাথায় মাথায় সাপের মত कृलिgउछ । কখনও সে ঠাকুরদাদার পোডো ভিটাটাতে ঢোকে নাই। বাহির হইতে তাহার বাবা তাহাকে দেখাইয়াছিল, বোধ হয় ঘন বন বলিয়া ভিতরে লইয়া যায় নাই। একবার ঢুকিয়া দেখিতে কৌতুহল হইল। জায়গাটা খুব উঁচু টিবিমত। কাজল এদিকে ওদিক চাহিয়া ঢিবিটার উপরে উঠিল--তারপর ঘন কুঁচকাটা ও শ্যাওড। বনের বেড়া ঠেলিয়া নিচের উঠানে নাবিল। চারিধারে ইট, বঁাশের কঞ্চি, ঝোপঝাপ । পাখি নাই এখানে ? এখানে তো কেউ আসে না-কত পাখির বাসা আছে হয়ত-কে বা খোজ রাখে ? বসন্তবৌরী ডাকে-টুকৃলি-টুকৃলি-তাহার বাবা চিনাইয়াছিল, কোথায় বাসাটা ? না, এমনি ডালে বসিয়া ডাকিতেছে ? মুখ উচু করিয়া খোকা বিকৃডে গাছের ঘন ডালপালার দিকে উৎসুক চােখে দেখিতে লাগিল । এক ঝলক হাওয়া ষেন পাশের পোড়ো টিবিটার দিক হইতে অভিনন্দন বহন করিয়া আনিল-সঙ্গে সঙ্গে ভিটার মালিক ব্রজ চক্রবর্তী, ঠ্যাঙাড়ে বীরু রায়, ঠাকুরদাদা হরিহর রায়, ঠাকুরমা সর্বজয়া, পিসিমা দুৰ্গা-জানা অজানা সমস্ত পূর্বপুরুষ' দিবসের প্রসন্ন হাসিতে অভ্যর্থনা করিয়া বলিল—এই যে তুমি ---“আমাদের হয়ে ফিরে এসেছ, আমাদের সকলের প্রতিনিধি যে আজ তুমি আমাদের আশীৰ্বাদ নাও, বংশের উপযুক্ত হও । আরও বাহির হইল। সোদালি বনের ছায়া হইতে জল আহরণরত সহদেব, ঠাকুরমাদের বেলতলা হইতে শরশয্যাশায়িত ভীষ্ম, এ ঝোপের ও ঝোপের তলা হইতে বীর কর্ণ, গাওঁীবধারী অজুন, অভাগিনী ভানুমতী, কপিধ্বজ রথে সারথি শ্রীকৃষ্ণ, পরাজিত রাজপুত্র দুর্যোধন, তমসা তীরের পর্ণ কুটিরে শ্রীতিমতী। তাপসবধূবেষ্টিতা আশ্রমুখী ভগবতী জানকী, স্বয়ংবর সভায় বরমাল্যহন্তে ভ্রাম্যমান অ্যানতাবাদনা সুন্দরী সুভদ্রা, মধ্যাহের খয়রৌদ্রে মাঠে মাঠে গোচারণরত সহায়-সম্পদহীন দরিদ্র ব্রাহ্মণ-পুত্র ত্রিজট-হাতছানি দিয়া হাসিমুখে অভ্যর্থনা করিয়া বলিল-এই যে - তুমি, এই যে আবার ফিরে এসেছ ! চেন না। আমাদের ? কত দুপুরে ভাঙা জানলাটায় বসে বসে আমাদের সঙ্গে মুখোমুখি যে কত পরিচয়। এসো- ‘এসো-‘এসো •