পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৬৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাজল প্রথম পরিচ্ছেদ শীত শেষ হইয়া বসন্তের বাতাস বহিতে শুরু করিয়াছে। পুরাতন পাতা ঝরিয়া গিয়া গাছে গাছে নতুন কচিপাতার সমারোহ। এই দিনগুলোতে কাজলের বেশীক্ষণ বাড়ীতে মন বসে না-বিশেষতঃ বৈকালের দিকে। সুর্য বঁাশবাগানের মাথা ছাড়াইয়া একটু নামিলেই রোদটা কেমন রাঙা আর আরামদায়ক হইয়া আসে। রাণুপিসিদের গাইটা অলস মধ্যাহ্নে জঙ্গলে ঘুরিয়া ঘুরিয়া ঘাসলতা খায়। কাজল উত্তরের জানালায় বসিয়া লক্ষ্য করে। কিছুক্ষণ পরে তাহার। আর মন টেকে না-বাহিরে যাইবার জন্য ছটফট করিতে থাকে। বন্য লতাপাতার যে বিশেষ ভ্রাণটা বাতাসে বহিয়া আসো-সেটাই যেন তাহাকে আরও চঞ্চল করিয়া তোলে। গন্ধটার সহিত এই বাহিরে যাইবার ইচ্ছার যে কি সম্পর্ক-তােহা সে বুঝিতে পারে না, কেমন যেন রহস্যময় ভাব হয় মনে। সন্তৰ্পণে দরজার খিল খুলিতে গেলে অসাবধানে আওয়াজ হয়। রাণু জাগিয়া বলে-ছেলের বুঝি আবার বেরুনো হচ্ছে ? কাজল একটু অপ্রতিভ হয় বটে, কিন্তু ভয় পায় না। খিলটা হাতে ধরিয়াই দুষ্টামির হাসি হাসিতে থাকে। বাহির হইতে দিতে রাণুর আপত্তি নাই। শুধু সাবধান করিয়া দেয়খববদার নদীতে নামবি নে, নৌকোয় উঠবি নে কিন্তু-বল, উঠিবি নে ? • কাজল প্রতিজ্ঞা করিয়া। তবে বাহিরে যাইবার অনুমতি পায়। অপু বলিয়া গিয়াছিল-দেখোঁ রাণুদি, নদীতে যেন একলা না যায়। চান করবার সময় তুমি সঙ্গে নিয়ে যাবে। ছেলেমানুষ, সঁাতার জানে না-ডুবে যেতে পারে। কাজলও রাণুপিসির কথার অবাধ্য হয় না-ইছামতীর ঘাটে জেলেদের মাছধরা নৌকোগুলি বাধা থাকে। এপাড়ার ওপাড়ার কিছু ছেলে জমা হইয়া তাহার উপর উঠিয়া খেলা করে। কাজলের পাড়ে বসিয়া খেলা ছাড়া গত্যন্তর নাই। পিসি বারণ করিয়াছে যে । বাড়ী হইতে বাহির হইয়া কাজল বাবার নতুন কেনা। আমবাগানের দিকে ইটিতে থাকে। বাগানের প্রান্তে কাহাজের একটা বঁাশঝাড়। সতুকাক সেদিন বলিতেছিল বঁশগাছ নাকি খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে। রাতারাতি নাকি বঁাশের কোড় একহাত লম্বা হইতে দেখা গিয়াছে। কথাটা শুনিয়া কাজলের মনে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা জাগিয়া উঠিল। তাই এ জায়গাকে সে