পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৭০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাদের মিঞার ক্ষেতের পাশে কাজল একবার থামিল। কাদের তাহার শালার সহিত পিডান দিতেছে ক্ষেত। কাজলকে দেখিয়া কান্দেরের শালা বলিলবাড়ী চলে যাও কর্তবাবা-বিষ্টি হতে পারে । কাদের আপত্তি করিয়া বলিল --পানি হবে না মোটে-দেখছো না চিল উড়ছে ওপরে। ডানায় পানি পলি নামি আসব নীচপানে। আবহাওয়া তত্ত্ব সম্বন্ধে তাহাদের আলাপ করিতে দিয়া কাজল হাটতে লাগিল মেঠোপথ ধরিয়া। ঐ পথটা গিয়াছে আষাঢ় - এই পথটা ঘুরিয়া গিয়াছে নদীর দিকে। একটা বড় গাছ রহিয়াচে দুইটা পথেব সঙ্গমস্থলে । জায়গাটা কাজলের বড় ভাল লাগে। গ্রামের যাবতীয় লোক এই পথ দিয়া আষাঢ়র হাটে গিয়া থাকে। অচেনা লোকও যায় কত। ভিন-গাঁ হইতে মালপত্র কঁধে করিয়া আলের পথ মাঠের পথ ধরিয়া এখানে আসে। এখান হইতে কঁাচা পথ ধরিয়া চলিয়া যায় হাটে । পণ্যাদি কঁাধে হাটমুখী জনস্রোত দেখিতে কাজলের বেশ লাগে । খানিকক্ষণ সেখানে বসিয়া কাজল একবার নদীর পথে কিছুদূর হাটিয়া আসিল। ফিরিয়া আসিতে আসিতে দেখিল একজন লোক আষাঢ়ার পথ। হইতে নামিয়া গ্রামের দিকে চলিয়া গেল। বুকটা তাহার একবার কেমন করিয়া উঠিল। দৌডাইয়া আগাইয়া গেল সে—এইবার লোকটার পিছনে ? আসিয়া পড়িয়াছে। বহুদিনের অনভ্যাসের ফলে শব্দটা যেন জিভ দিয়া আর বাহির হইতেছে না । মাথার মধ্যে কেমন করিতেছে। পথের পাশের জঙ্গল হইতে বাতাস অজস্র বন্যপুষ্পের গন্ধ বহিয়া আনিতেছে। একটা ধাক্কা দিয়া কাজল শব্দটা বাহির করিল-বাবা । অপু বিদ্যুৎস্পৃষ্ট্রের ন্যায় ফিরিয়া তাকাইল। এই ডাকটার জন্য সে ছুটিয়া আসিতেছে পৃথিবীর এক প্রান্ত হইতে। সমুদ্রের ফেনোচ্ছিল। উর্মিমালা, বিষুবমণ্ডলীর দেশের তারকাখচিত তমিস্র রাত্রির আকর্ষণ, উষ্ণ বালুকায় শুকীয়া উপরে নারিকেল-পাতায় বাতাসের মর্মরধ্বনি শুনিবার অদ্ভুত অনুভূতি —সব সে ত্যাগ করিয়া আসিয়াছে এই ডাকটা শুনিবার লোভেই তো! সে থাকিতে পারে নাই । অপুর হাত হইতে ব্যাগ আর বাক্স পড়িয়া গেল ধূলায়। পথের মধ্যে হাটু গাডিয়া বসিয়া সে দুই হাত সামনে বাড়াইয়া দিয়া চোখ বুজিল। পরীক্ষণেই কাজল ঝাঁপাইয়া পড়িল অপুর বাহুবন্ধনে। চিলগুলি ঘুরিয়া ঘুরিয়া নামিয়া আসিতেছিল নীচে। এইবার বৃষ্টি নামিবে। সন্ধ্যায় রাণীর রান্নাঘরের দরজায় পিড়ি পাতিয়া বসিয়া অপু মনের আনন্দে গল্প করিতেছিল। y