পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৭১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপু সবিস্ময়ে তাকাইয়া দেখিল, কাজল রেললাইনের ধারে ঢালু জমিটার দিকে চাহিয়া ভয়ে কাঠ হইয়া দাড়াইয়া আছে । রেললাইনের পাশে একটা গরু পড়িয়া রহিয়াছো-মৃত । ট্রেনের ধাক্কায় নিশ্চয় মারা গিয়াছে। সিং দুইটা ভাঙিয়া কোথায় গিয়াছে কে জানে, মেরুদণ্ড ভাঙিয়া শরীরটাকে প্রায় একটা মাংসপিণ্ডে পরিণত করিয়াছে। পিঠের কাছে চামড়া ফুটা হইয়া একটুকরা রক্তাক্ত মেরুদণ্ডের হাড় বাহির হইয়া আছে। ঘাড় ভাঙা, মুখের কোণে রক্তমাখা ফেনা। -বাবা ! কাজল যেন কেমন হইয়া কঁাপিতে কঁাপিতে উবু হইয়া বসিয়া পড়িল, তাহার মুখের ভাব দেখিয়া অপু ভয় পাইয়া গেল। --কি রে ? ভয় কি ? ওঠে। বাবা, মাণিক আমার ! কোন ভয় নেই । কাজল রক্তশূন্য মুখে বলিল-সেই লোকটার গরু । একেবারে মরে গেছে বাবা ? আমার খারাপ লাগছে । বাড়ী আসিবার পথে কাজল কঁাদিয়া অস্থির। জোরে কঁদে নাই, ফু পাইয়া কঁদিতেছে । অপু অনুভব করিতেছিল, তাহার হাতের ভিতর কাজলের হাত বরফের মতো ঠাণ্ডা। অপুর নিজেরও খারাপ লাগিতেছিল। বীভৎস দৃশ্যটা ! কেন যে, ওই পথে গেল তাহারা । --তুই অত ভয় পেলি কেন ? হ্যা রে ? কাজল জবাব দিতে পারিল না। তাহার মনের মধ্যে ঘুরিতেছিল ঈষৎ ফঁাক-হওয়া রক্তফেনা-মাখা মুখ, ভাঙা মেরুদণ্ডের বাহির-হইয়া-থাকা হাড়টা আর মৃত গরুর পড়িয়া থাকিবার অস্বাভাবিক ভঙ্গি । অসুন্দর জিনিসের সহিত তাহার পরিচয় কম, সুন্দর সন্ধ্যায় বেড়াইতে বাহির হইয়া এই প্রথম সরাসরি অসুন্দরের সহিত পরিচয় হইয়া গেল । এ দিনটা কাজল ভুলিতে পারে নাই। মালতীনগরে যে স্কুলে কাজল ভতি হইয়াছে, সেটা অপুর বাসা হইতে খুব একটা দূরে নহে। তবু অপু কাজলকে স্কুলে পৌছাইয়া দিতে আসে। আবার ছুটি হইলে লইয়া আসে। বাদবাকি সময় তাহার একার, নিজস্ব। এই সময় সে একটি নূতন উপন্যাস লিখিয়া থাকে। প্রথম উপন্যাসের সাফল্য তাহাকে সাহসী করিয়াছে। এক উপন্যাসেই তাহার বলিবার কথা শেষ হইয়া যায় নাই। অনেক বাকী রহিয়াছে। এই উপন্যাসে তাহা লিখিৰে। আশেপাশের দুই একজন প্রতিবেশী অপুর কাছে যাতায়াত করিয়া থাকেন। ቅb”