পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৭১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাজল অবাক হইয়া ব্যাপারটা দেখিতেছে। অপেক্ষাকৃত কমবয়সী মেয়েটি লজ্জিত সুরে বলিল-আপনিই তো অপূর্বকুমার রায়, লেখক ? অপুর মনে ভারী আনন্দ হইল। সে লেখক বলিয়া মেয়ে দুটি দেখা করিতে আসিয়াছে। এ অভিজ্ঞতার স্বাদ তাহার নিকট একেবারে নূতন। প্রশংসা সে আগেও পাইয়াছে, কিন্তু মেয়েদের নিকট হইতে তাহ পাওয়ায় একটা আলাদা আনন্দ রহিয়াছে। মেয়ে দুটি মালতীনগরেই থাকে। ছোট মেয়েটির নাম হৈমন্তী, বড়টি তাহার দিদি, নাম-সরযু হৈমন্তীর সাহিত্যে গভীর অনুরাগ আছে, সে অপুর লেখা পডিয়া অবাক হইয়াছে তাহার ক্ষমতায়। অপু কি তাহাকে একটা অটোগ্রাফ দিবে ? অপু সত্যই অবাক হইল। মফঃস্বলে মেয়ের এক বেড়াইতেছে, ইহা বেশ নূতন দৃশ্য। তাহ ব্যতীত কলিকাতায় অটােগ্রাফ চাহিলে ততটা অবাক হইবার কারণ থাকে না, কিন্তু মালতীনগরে অটোগ্রাফ ! না, মেয়ে দুটি দেখা যাইতেছে বেশ আলোকপ্রাপ্ত । অটোগ্রাফ দেওয়ার পর অপু তাহদের চা খাইতে অনুরোধ করিল। তাহারা লেখকের সহিত কথা বলিতেই আসিয়াছিল, অতএব বিশেষ আপত্তি कळिन न् । কথায় কথায় প্রকাশ পাইল, হৈমন্তী গল্প লিখিয়া থাকে ! অপু বলিলসেটা আগে বলেন নি কেন ? বাং, খুব ভাল কথা। একদিন নিয়ে আসুন, পড়া যাক । দিদি কথাটা প্রকাশ করিয়াছিল। হৈমন্তী সরযুর দিকে কটমট করিয়া তাকাইল, অপুর মজা লাগিতেছিল। হৈমন্তীর ছেলেমানুষি তাহার মনের আনন্দকে হঠাৎ ডাকিয়া তুলিল। নারীর স্পর্শ না থাকিলে জীবনটা পানসে লাগে, নারীর কল্যাণহস্তই জীবনের রূপ পালটাইয়া দেয়। হৈমন্তী একখানা চাপাফুল-রঙের শাড়ী পরিয়া আসিয়াছিল, শাড়ীর আঁচল হাতে জডাইতে জড়াইতে লজ্জিত মুখে বলিল-দিদির যেমন কাণ্ড ! লেখাটেখা কিছু নয়, ও এমনি সরষু বাধা দিয়া বলিল-না অপূর্ববাবু। বিশ্বাস করবেন না। ওর কথা । এই সেদিনও ওর লেখা বেরিয়েছে কাগজে । সরষু যে পত্রিকার নাম করিল, সেটা শুনিয়া অপু সত্যিই বিস্মিত হইল । বাংলা দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাসিকপত্রে যদি এই দুগ্ধপোস্য বালিকার রচনা ছাপা হইয়া থাকে। তবে তাহ অবশ্যই একবার পড়িয়া দেখিতে হইতেছে। V93