পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৭৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হইয়াছে। সন্ধ্যায় দুই ঘণ্টা তাহাকে বাবার কাছে বসিয়া পড়িতে হয়। চোখের সামনে তাহার এ কি জগতের দ্বার খুলিয়া যাইতেছে । এ কি আনন্দ আর আলোর জগৎ । পৃথিবীর সাধারণ অকিঞ্চিৎকর বস্তুও এ আলোর স্পর্শে অসাধারণ হইয়া উঠিতেছে। এমন ভাবে যাহারা তাহাকে পৃথিবীটা দেখিতে শিখাইতেছে, তাহদের কাছে সে কৃতজ্ঞ থাকিবে । ফরাসী ছোটগল্পের অনুবাদ পডিয়া প্রথম তাহার চোখ ফুটিয়াছিল। রোজাকার জীবনে দেখা সামান্য ঘটনা লেখকের হাতে এক গভীর তাৎপর্য লাভ করিয়াছে। এক জায়গায় একটি বৃষ্টির বর্ণনা এবং অপর জায়গায় একটি জোৎস্মারাত্রির বর্ণনা তাহাকে পাগল করিয়া দিয়াছিল। এখনও বর্ষার দিনে এবং জ্যোৎস্নারাত্রিতে গল্প দুইটিকে সে মনে করিয়া থাকে। একটু বয়স হওয়ায় সে বাবাকে চিনিতে পারিতেছে। বাবার কেমন একটা আলাদা অস্তিত্ব আছে, সে বুঝিতে পারে। সেটা বাবার সাংসারিক অস্তিত্ব নহে --অন্য কিছু। সবা-কিছুর ভিতরে থাকিয়াও বাবা সব-কিছু হইতে আলাদা। একদিন বাবাকে বড় অদ্ভুত লাগিয়াছিল। বেড়াইতে যাইবে বলিয়া বাহির হইতে গিয়া সে দেখিল, বাবা উঠানের প্রান্তে ইউক্যালিপটাস গাছটার নীচে সতরঞ্চি পাতিয়া বসিয়া লিখিতেছে। হয়তো কিছু মনে আসিতেছে না, কোন উপযুক্ত শব্দ খুজিয়া পাওয়া যাইতেছে না, তাই বাবা কলমটা হাতে ধরিয়া উদাস ভাবে দূরে তাকাইয়া আছে। ডানদিকের কঁধটা একটু নিচু দেখাইতেছে। ফর্সা ঋজু দেহ বাবার। হঠাৎ বাবার জন্য ভীষণ মায়া হইল, ভীষণ-ভীষণ ইচ্ছা হইল বাবার কোলের কাছে গিয়া মুখ গুজিয়া থাকে । শরীরের ভিতরের প্রতি শিরায় সে পিতার প্রতি ভালবাসার স্রোত অনুভব করিল। বাবার শরীর মোটে ভাল যাইতেছে না-বাবা কাহাকেও বলে না, কিন্তু কাজল জানে। হৈমন্তীর বাবা সুরপতিবাবু একদিন মৌপাহাড়ীতে আসিয়া হাজির হইলেন। কি কাজে জামসেদপুর আসিয়াছিলেন-পথে মৌপাহাড়ী ঘুরিয়া যাইতেছেন। হৈমন্তী দৌড়াইয়া আসিয়া প্রণাম করিল। অপু ব্যস্ত হইয়া পডিল খাওয়াইবার আয়োজনের জন্য। কাজল একটু থাতমত খাইয়াছিল, কিন্তু লজ্জা কাটিয়া গেলে দেখিল দাদু খুব ভালমানুষ। কাজলকে ডাকিয়া তিনি বলিলেন, আজকে লায়াদিন আমি তোমার সঙ্গে গল্প করব দাদু-কেমন ? হৈমন্তী বলিল-তুমি দু'একদিন থাকবে তো বাবা ? --না মা, সময় নেই হাতে একদম। পরের কাজে আসা R