পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সকলেই বাড়ী হইতে ছোট ছোট মাদুর আনিয়া পাতিয়া বসে ; অপুর মাদুর নাই, সে বাড়ী হইতে একখানা জীর্ণ কাপোেটর আসন আনে। যে ঘরটায়। পাঠশালা হয়, তার কোনো দিকে বেড়া বা দেওয়াল কিছু নাই ; চারিধারে খোলা, ঘরের মধ্যে সারি দিয়া ছাত্রগণ বসে। পাঠশালা ঘরের চারিপাশে বন, পিছন দিকে গুরুমহাশয়ের পৈতৃক আমলের বাগান। অপরাহের তাজা, গরম রৌদ্র বাতাবীলেবু, গাব ও পেয়ারাতলী আমগাছটার ফঁাক দিয়া পাঠশালার ঘরের বঁাশের খুঁটির পায়ে আসিয়া পড়িয়াছে। নিকটে অন্য কোনোদিকে কোনো বাড়ী নাই, শুধু বন ও বাগান, একধারে একটা যাতায়াতের সরু পথ। আট-দশটি ছেলে মেয়ের মধ্যে সকলেই বেজায় দুলিয়া ও নানারূপ সুর করিয়া পড়া মুখস্থ করে ; মাঝে মাঝে গুরুমহাশয়ের গলা শোনা যায়,--এই ক্যাবলা, ওর শেলেটের দিকে চেয়ে কি দেখছিস ? কান ম’লে ছিড়ে দেবো। একেবারে! নুটু, তোমার ক’বার নেতি ভিজুতে হবে ? ফের যদি দেখি নেতি ভিজুতে উঠেচ-- গুরুমহাশয় একটা খুঁটি হেলান দিয়া একখানা তালপাতার চাটাইএর উপর বসিয়া থাকেন। মাথাব। তেলে বাঁশের খুঁটির হেলান দেওয়ার অংশটা পাকিয়া গিয়াছে। বিকালবেল প্রায়ই গ্রামের দীচ্চ পালিত কি বাজু বায় র্তাহার সহিত গল্প করিতে আসেন। পড়াশুনার চেয়ে এই গল্প-শোনা অপুর অনেক বেশী ভাল লাগিত । রাজু বায মহাশয় প্রথম যৌবনে “বাণিজ্যে লক্ষ্মীর বাস’ স্মরণ করিয়া কি ভাবে আষাঢ়াব হাটে তামাকের দোকান খুলিয়াছিলেন সে গল্প করিতেন। অপু অবাক হইয়া শুনিত। বেশ কেমন নিজের ছোট দোকানের ঝাপটা তুলিয়া বসিয়া বসিয়া দা দিয়া তামাক কাটা, তারপর রাত্রে নদীতে যাওয়া, ছোট হঁাডিতে মাছের ঝোল ভাত রাধিয়া খাওয়া, হয়তো মাঝে মাঝে তাদের সেই মহাভারতখানা কি বাবার সেই দাশুরায়ের পাঁচালীখানা মাটির প্রদীপের সামনে খুলিয়া বসিষা বসিয়া পড়া। বাহিরে। অন্ধকারে বর্ষাবাতে টিপ টপ বৃষ্টি পন্ডিতেছে, কেহ কোথাও নাই, পিছনের ডোবায় ব্যাঙ ডাকিতেছে--কি সুন্দর । বন্ড হইলে সে তামাকের দোকান করিবে । qझे গম্বুগুজব এক এক দিন আবার ভাব ও কল্পনার সর্বোচ্চ স্তরে উঠিত, গ্রামের ও পাড়ার রাজকৃষ্ণ সান্যাল মহাশয় যেদিন আসিতেন। যে কোনো গল্প হউক, যত সামান্যই হউক না কেন, সেটি সাজাইয়া বলিবার ক্ষমতা তাহার ছিল অসাধারণ । সান্যাল মহাশয় দেশভ্রমণ-বান্তিকগ্রান্ত ছিলেন। কোথায় দ্বারকা, কোথায় সাবিত্রী পাহাড়, কোথায় চন্দ্রনাথ, তাহা p