পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রকম বঁাশবন । পৌষপার্বণের দিন। ওই ঢেকীশালে একমণ চাল কোটা হইত পৌষ-পিঠার জন্য-চোখ বুজিয়া ভাবিলেই ইন্দির ঠাকুরুণ সে সব এখনও দেখিতে পায় যে ! ঐ রায়বাড়ীর মেজবৌ লোকজন সঙ্গে করিয়া চাল কুটাইতে আসিয়াছেন, ঢেকীতে দমাদম পাড় পন্ডিতেছে, সোনার বাউট রাঙা-হাতে একবার সামনে সরিয়া আসিতেছে আবার পিছাইয়া যাইতেছে, জগদ্ধাত্রীর মত রূপ, তেমনি স্বভাব্যচরিত্র। নতুন যখন ইন্দির ঠাকুরুণ বিধবা হইল, তখন প্রতি দ্বাদশীর দিন প্রাতঃকালে নিজের হাতে জলখাবার গোছাইয়া আনিয়া তাহাকে খাওয়াইয়। যাইতেন । কোথায় গেল কে ! সেকালের আর কেহ বাচিয়া নাই যার সঙ্গে সুখদুঃখের দুটাে কথা কয়। তারপর এ সংসারে আশ্রয়দাতা রামচাদ মারা গেলেন, তার ছেলে হরিহর তো হইল সেদিন । ঘাটের পথে লাফাইয়া লাফাইয়া খেলিয়া বেড়াইত, মুখুয্যেদের তেঁতুল গাছে ডাশা তেঁতুল খাইতে গিয়া পডিয়া হাত ভাঙিয়া দুইতিন মাস শয্যাগত ছিল ; সেদিনের কথা। ধুমধাম করিয়া অল্প বয়সে তাহার বিবাহ হইল-পিতার মৃত্যুর পর দশ বৎসরের নববিবাহিত পত্নীকে বাপের বাড়ী ফেলিয়া রাখিয়া দেশছাড়া হইয়া গেল। আট দশ বছর প্রায় কোন খোজখবর ছিল না-কালেভদ্রে এক-আধখানা চিঠি দিত, কখনো কখনো দু’পাচ টাকা বুভীর নামে মনি-অর্ডার করিয়া পাঠাইত। এই বাড়ী আগুলিয়া কত কষ্টে কতদিন না খাইয়া, প্রতিবেশীর দুয়ারে চাহিয়া চিন্তিয় তাহার দিন গিয়াছে। অনেকদিন পরে হরিহর আজ ছয় সাত বৎসর আসিয়া ঘর সংসাব পাতিয়াছে, তাহার একটি মেয়ে হইয়াছে।-সেও প্রায় ছয় বৎসরেরটি হইতে চলিল। বুড়ী ভাবিয়াছিল এতদিনে সেই ছেলেবেলার ঘর-সংসার আবার বজায় হইল। তাহার সঙ্কীর্ণ জীবনে সে অন্য সুখ চাহে নাই, অন্য প্রকার সুখদুঃখের ধারণাও সে করিতে অক্ষম-আশৈশব-অভ্যন্ত জীবনযাত্রার পুরাতন পথে যদি গতির মোডটা ঘুরিয়া দাড়ায় তাহা হইলে সে খুশী, তাহার কাছে সেটাই চরম সুখেয়া কাহিনী । হরিহবের ছোট মেয়েটাকে সে একদণ্ড চোখের আডাল করিতে পারে নাBDB DBDBB BBB BBDD DS DD DDD DBDBB BBDDS BD DBBDD বিবাহ হয় এবং বিবাহের অল্প পরেই মারা যায় । হরিহরের মেয়ের মধ্যে বিশ্বেশ্বরী মৃত্যুপারের দেশ হইতে চল্লিশ বছর পরে তাহার অনাথ মায়ের কোলে আবার ফিরিয়া আসিয়াছে। চল্লিশ বছরের নিভিয়া-যাওয়া ঘুমন্ত মাতৃত্ব মেয়েটার মুখের বিপন্ন অপ্রতিভ ভঙ্গিতে, অবোধ চোখের হাসিতে—একমুহুর্তে সচকিত আগ্রহে, শেষ-হইতে-চলা জীবনের ব্যাকুল ক্ষুধায় জাগিয়া উঠে।