পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৮০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যায়। আধো-ঘুমের মধ্যে আমি হাতড়ে বিছানায় খুজি-যেন সার্থকতার চাবিকাঠি কেউ আমার কাছেই রেখে গেছে। পাই না, হাতে ঠেকে মায়ের গা । শেষ-রাত্রের তরল অন্ধকারে হঠাৎ জেগো-যাওয়া চোখে মাকে আঁকড়ে শুয়ে থাকি। যেন মাকে ছেড়ে দিলেই আঁধার-সমুদ্রের ঢেউ আমাকে ভাঙাপানসীর মত ভাসিয়ে নিয়ে যাবে কোথায় । আমার স্বভাব বড় রুক্ষ হয়ে উঠছে। হয়তো মানসিক অসন্তুষ্টিই এর কারণ। আমি বুঝতে পারি না, সবাই কি করে একে অস্বীকার করে হাসিমুখে বেঁচে আছে । হয় তারা সবাই একযোগে বোকা, নয়তো আমার থেকে অনেক জ্ঞানী। আজকাল বেড়াতে গিয়ে মাঠের মধ্যে জঙ্গলের মধ্যে সব জায়গায় অতৃপ্তি অনুভব করি । কালো পোশাক-পরা কে-একজন আমার পেছন পেছন আসে-তাকে আমি দেখতে পার্ক না, তাকে অনুভব করি। জানি দিন যত কাটাবে, তার আর আমার ব্যবধান ততই কমে আসতে থাকবে । পরমেশের বোনের শ্বশুরবাড়ী ব্যারাকপুরে। বোনকে শ্বশুরবাডী পৌছে দিতে সে গিয়েছিল, আমায় সঙ্গে নিয়েছিল। দুপুরবেলা তার ভগ্নীপতির বাড়ী খাওয়াদাওয়া সেরে গঙ্গার ধারে গিয়ে বসলাম। এধারে লোকজন কম, কাছেই মিলিটারী ব্যারাক। গঙ্গার পাড়ে বাবলার বন, দূর থেকেই দেখা যায় বাবলাগাছেব কঁাকে ফঁাকে নদীর জল চিকচিক করছে। উচু পাড়ে বসে ওপারে শ্রীরামপুরের দিকে তাকিয়ে কি ভাবছি, এমনি সময় নজরে পড়ল পাড়ের নিচেই কাদার ওপরে পড়ে আছে একটা ছোট কাগজের বাণ্ডিল-নীলম্মুতো দিয়ে বাধা । কি রকম মনের ভাব হলো-জুতো খুলে টপ করে নিচে নামিলােম জলের কাছাকাছি। তখন ভঁাটা চলছে, জল এসে। কাগজগুলোকে স্পর্শ করে নি। যে ফেলেছে, কিছুক্ষণ আগেই সে এখানে ছিল । স্থাতোটা না খুলে ভাববার চেষ্টা করলাম, এগুলো কি হতে পারে। বাজে কাগজ ? দলিল ? বাড়ীভাডার পুরোনো রসিদ ? প্রেমপত্র ? খুলে দেখি প্রেমপত্রই বটে। ঘটনাটা উপন্যাসের মত শোনাচ্ছে-ভায়েরীর ছেড়া-পাতায় কঁাচাহাতের লেখায় ভুল-বানানে প্রায় পনেরো কুড়িটি প্রেমপত্র নীলস্থতো দিয়ে বাধা। যাকে লেখা, তার জীবনে হয়তো এগুলোর প্রয়োজন ফুরিয়েছে। এতদিন সযত্বে রাখা ছিল বাক্সের কোণে, বের করে আজ গঙ্গার বুকে ফেলে দিয়ে গেছে। চিঠিগুলি তখন পড়ি নি। বাড়ী এসে পড়বার-ঘরে টেবিল-ল্যাম্প এক একখানা করে পড়ে ফেললাম। নাম দেওয়া নেই। তবে একটু বোঝা যায়,