পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাছে প্রায় বেলা গেল, তখন ওসব দিকে কি রকম ভয়ভীত ছিল, তা রাজকৃষ্ট ভায়া জানো নিশ্চয় । একে মাঠের রাস্তা, সঙ্গে মেয়েমানুষের দল, কিছু টাকাকড়িও আছে—বড় ভাবনা হােল। আজকাল যেখানে নতুন গা-খানা বসেচে ?-ওই বরাবর এসে হোল কি জানো ? জন-চারেক ষণ্ডামাক্কোগোছেব মিশ-কালো লোক এসে গাভীর পেছন দিকের বঁাশ দুদিক থেকে ধল্লে। এদিকে দুজন, ওদিকে দুজন । দেখে তো মশাই আমাদের মুখে আর র-টা নেই, কোনো বকমে গাভীর মধ্যে ব’সে আছি, এদিকে তারাও গাড়ীর বঁাশ ধ’রে সঙ্গেই আসচে, সঙ্গেই আসচে, সঙ্গেই আসচে। বুধে গাডোয়ান দেখি পিট পিটু ক’রে পেছন দিকে চাইচে । ইশারা ক’রে আমাদের কথা বলতে বারণ ক’বে দিলে। বেশ, আছে । এদিকে গাড়ী একেবারে নবাবগঞ্জ থানার কাছাকাছি এসে পডল। বাজার দেখা যাচ্চে, তখন সেই লোক ক’জন বল্লে-ওস্তাদজী, আমাদেব ঘাট হয়েচে, আমরা বুঝতে পারিনি, ছেড়ে দাও । বুধে গাডোয়ান বল্লে-সে হবে না ব্যাটারা। আজ সব থানান্য নিযে গিয়ে বাঁধিয়ে দোব। অনেক কাকুতি মিনতির পর বুধে বল্লেআচ্ছা যা, ছেডে দিলাম। এবার, কিন্তু কক্ষনো এরকম আর করিাসনি! তবে তাবা বুধে গাডোয়ানের পায়ের ধূলো নিয়ে চলে গেল। আমার স্বচক্ষে দেখা । মন্তরের চোটে ওই যে ওরা বঁাশ এসে ধরেচে, ধ’রেই রয়েচে-আর ছাড়াবাব সাধ্যি নেই-চলেচে গাড়ীর সঙ্গে। একেবারে পেরোক-আঁাটা হ’য়ে গিযেচে । তা বুঝলে বাপু ? মন্তব-তন্তবের কথা গল্প বলিতে বলিতে বেলা যাইত। পাঠশালাব চারিপাশের বনজঙ্গলে অপরান্ত্রের রাঙা রৌদ্র বঁাকা ভাবে আসিয়া পডিত । কঁঠালগাছের, জগডুমুর গাছের ডালে-ঝোলা গুলঞ্চলতার গায়ে টুনটুনি পাখী মুখ উঁচু করিয়া বসিয়া দোল খাইত। পাঠশালাঘরে বনের গন্ধের সঙ্গে লতাপাতার চাটাই, ছেড়াখোডা বই-দপ্তর, পাঠশালার মাটির মেঝে, ও কন্ড দা-কাটা তামাকের ধোয়া, সবসুদ্ধ মিলিয়া এক জটিল গন্ধের সৃষ্টি করিত। حمضي সে গ্রামের ছায়া-ভরা মাটির পথে একটি মুগ্ধ গ্রাম্য বালকের ছবি আছে। বইদপ্তর বগলে লইয়া সে তাহার দিদির পিছনে পিছনে সাজিমাট দিয়া কাচা, সেলাই করা কাপড পরিয়া পাঠশালা হইতে ফিরিতেছে, তাহার ছোট্ট মাথাটির অমন রেশমের মত নরম, চিকণ সুখ-স্পর্শ চুলগুলি তাহার মা। ষত্ব করিয়া আঁচড়াইয়া দিয়াছে—তাহার ভােগর সুন্দর চােখদুটিতে কেমন যেন অবাক ধরণের চাহনি-যেন তাহারা এ কোন অদ্ভুত জগতে নতুন চোখ মেলিয়া চাহিয়া চাহিয়া দিশাহারা হইয়া উঠিয়াছে। গাছপালায় ঘেরা এটুকুই কেবল ዓ፭)