পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অন্নদা রায়ের বাড়ী ঢুকিতেই একটা হৈ চৈ চীৎকার ও কান্নাকাটির কলবর তাহার কানে গেল। বাড়ীর মধ্যে না চুকিয়া সে দরজার কাছে দাড়াইল । রোয়াকের একপাশে দাড়াইয়া আন্নদা রায়ের বিধবা ভগ্নী সখী ঠাকরুণ চীৎকার করিয়া বাড়ী ফাটাইতেছেন :- --তাই কি মনে একটু ভয় আছে নাকি ? ঢের ঢের জাহাবাজ মেয়েমানুষ দেখিচি, এমন আর কখনো দেখিনি রে বাপু, পায়ে গড় করি-বলে ঐ যমের মত সোয়ামী, রাগলে হাড়ে মাসে এক রাখে না-তাই না হয় বাপু, একটু সমঝে চলি । সত্যিই তো, আজ তিন দিন ধরে বলচে ধানগুলো একটু রোদে দাও, ওগো ধানগুলো একটু রোদে দাও-কথা কি গেরাহি হয় নাকি ? না, কানো যায় ? কার কথা কে শোনে ? গোরস্থ ঘরের বৌ ধান ভানবে, কাজ করবে। এই জানি-ত না, রাদিন পটের বিবি সেজে বসে আছে -“পিটের বিবি’ জিনিসটি পরিস্ফুট করিবার জন্য উত্তমরূপে সাজিয়া যেরূপ ভাবে বসিয়া থাকা উচিত বলিয়া সখীঠাকৃরুণের ধারণা তিনি এখানে তাহার অভিনয় করিলেন-এ তো বাৰু কখনো কোথাও বাপের জন্মে দেখিনি, শুনিওনি দালানের মধ্য হইতে অন্নদা রায়ের পুত্রবধূ নাকীসুরে কঁাদিতে কঁাদিতে বলিল-পটের বিবি হ’য়ে সেজে বসে থাকি নাকি! কাল যে দশ সের মুগের ডাল ভাজিলাম। সারা বিকেল ধরে ? দুপুর বেলা খেয়েই আরম্ভ করিচি, আর যখন পাচটার গাড়ী যাওয়ার শব্দ পেলাম তখনও খোলার তাতেই বসে আছি, দু-ধামা ডাল ভাজা রে, ভাঙা রে-ক’রে, অন্ধকার হয়ে গিয়েচে তখন উঠিচি--- সে কি আমনি হয় ? গা-গতর ব্যথা হয়ে গেচে, রাত্তিরে বলি বুঝি জর হোলো, এমনি গায়ে-হাতে ব্যথা-তা কি কেউ দ্যাখে ? তার ওপর সকালবেল বিনি দোষে এই মার-কেন, সংসারে কি বসে বসে খাই ? এমন সময় অন্নদা রায়ের ছেলে গোকুল এক হাতে একখানা কঁাচ বঁাশের পাতাসুদ্ধ ডগা ও আর এক হাতে দা লইয়া বাড়ী ঢুকিল। স্ত্রীর কান্নার শেষ অংশ শুনিতে পাইয়া গর্জন করিয়া কহিল—এখনও তোমার হয়নি-এখনও তোমার আদেষ্টে বেস্তর দুকুখু আছে দেখচি-আমার রাগ বাড়িও না মেলা, সক্কাল বেলা ! আজি তিনদিন ধরে ধানগুলো রোদরে দেওয়ার জন্যে বলে বলে হয়রান-এই মেঘলা মেঘলা যাচ্চে, এর পর ধানগুলো যদি কলিয়ে যায়, তবে তোমার কোন বাবা এসে সামলাবে ? সারা বছরের পিণ্ডি জুটবে কোখোঁকে ? গোকুলের বৌ হঠাৎ কান্না বন্ধ করিয়া তেজের সহিত জোর গলায় বলিয়া উঠিল-তুমি আমার বাবা তুলে গালাগালি করো না বলে দিচ্ছি-আমার