পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাজারে খোজ করা হইয়াছিল-পিতাম নামক কোন লোকের সেখানে কাসারির দোকান নাই বা উক্ত চেহারার কোনো লোকও সেখানে নাই । করেক মাস কাটিয়া গিয়াছে । ভাদ্র মাস । অপু বৈকাল বেলা বেড়াইতে যাইবার সঙ্কল্প করিতেছে, এমন সময় তাহার মা পিছনে ডাকিয়া বলিল-কোথায় বেরুচ্চিস রে অপু ? চাল ভাজা আর ছোলা ভাজা ভাজচি-বেরিও না যেন |• • •এক্ষুনি খাবি অপু শুনিয়াও শুনিল না-যদিও সে চাল ছোলা ভাজা খাইতে ভালবাসে বলিয়াই মা তাহার জন্য ভাজিতে বসিয়াছে, ইহা সে জানে—তবুও সে কি করিতে পারে ? এতক্ষণ কি খেলাটাই চলিতেছে নীলুদের বাড়ীতে ! সে যখন বাহির দরজায় পা দিয়াছে, মা’র ডাক আবার কানে গোল-বেরুলি বুঝি ! -ও অপু, বা রে, দ্যাখে মজা ছেলের ! গরম গরম খাবি-আমি তাড়াতাড়ি ঘাট থেকে এসে ভাজতে লাগলাম-ও অপু-উ-উ- অপু এক ছুটি দিয়া নীলুদের বাড়ী গিয়া পৌছিল। অনেক ছেলে জুটিয়াছিল, অপু আসিবার আগেই খেলা সাঙ্গ হইয়া গিয়াছে! নীলু বলিল,-চল অপু দক্ষিণ মাঠে পাখীর ছানা দেখতে যাবি ? অপু রাজি হইলে দুজনে দক্ষিন মাঠে গেল। ধান ক্ষেতের ওপারেই নবাবগঞ্জের বাধা সড়কটি পূর্ব পশ্চিমে লম্বা হইয়া যেন মাঠের মাঝখান চিরিয়া চলিয়া গিয়াছে। গ্রাম হইতে এক মাইলের উপর হইবে। অপু এতদূর কখনো বেড়াইতে আসে নাই—তাহার মনে হইল যেন সমস্ত পরিচিত জিনিসের গণ্ডী ছড়াইয়া কোথায় কতদূরে নীলুদা তাহাকে টানিয়া আনিল। একটুখানি পরেই সে বলিল, বাড়ী চল নীলুদা, আমায় মা বাকবে, সন্দে হ’য়ে যাবে, আমি এক গাবতলার পথ দিয়ে যেতে পারবো না। তুমি বাড়ী চল— ফিরিতে যাইয়া নীলু পথ হারাইয়া ফেলিল। ঘুবিয়া ফিরিয়া কাহাদের একটা বড় আমবাগানের ধার দিয়া একটা পথ মিলিল। সন্ধ্যা হইবার তখনও কিছু বিলম্ব আছে, আকাশে আবার মেঘ ঘনাইয়া আসিতেছে—এমন সময় চলিতে চলিতে নীলু হঠাৎ থমকিয়া দাড়াইয়া অপুর কনুই-এ টান দিয়া সম্মুখ দিকে চাহিয়া ভয়ের সুরে বলিল-ও ভাই অপু ! অপু সঙ্গীর ভয়ের কারণ বুঝিতে না পারিয়া বলিল-কি রে নীলুদা ? পরে সে চাহিয়া দেখিল, যে সুড়ি পথটা দিয়া তাহারা চলিতেছিল, তাহা কাহাদের উঠানে গিয়া শেষ হইয়াছে উঠানে। একখানা ছোট্ট চালাঘর ও একটা বিলাতী।