পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আছে। চাবি ছেলের হারিয়ে ফেললে মুশকিল হবে, তাই এই লুকোনো দেরাজে চাবি নেই, একটা করে কীল আছে, সেইটে সরিয়ে দিলেই দেরাজটি আপনি খুলে যায়। সেইখেনে সবার সবুজ পাতায় বাধানে এতটুকু খেলার খাতাখানি। সারাদিন যে যা খেলেছে, যা দেখেছে, যা পেয়েছে, য। হারিয়েছে; আর যা পেতে চায়, খুজে বেড়ায়, এমন কি রাতের স্বপ্নের ছবিও, এই ছোটো খাতায় রোজরোজ নতুন-নতুন করে লেখা হয়ে যাচ্ছে । এ খাত এমনি চমৎকার এমনি চকচকে যে ছেলেরা হাতে পেলে তার মলাট চিবিয়ে সন্দেশ বলে সেটাকে খেয়েই ফেলত। তাই মা মনের লুকোনো দেরাজ রোজ রাতে উল্টে-পাণ্টে দেখে চুপিচুপি বন্ধ করে রাখেন। যতদিন না নিজের মনের সিন্দুক তারা নিজেরা গোছাতে পারে ততদিন কোনো ছেলে-মেয়ে এই লুকোনো খাতার সন্ধান পায় না । অনেক ছেলে দেখেছি বুড়ো হয়ে মরে গেল তবু এই সবুজ খাতা লুকোনো দেরাজের সন্ধানই পেল না ; আবার অনেক ছেলে দেখেছি আগেই ওই খাতার সন্ধান পেয়ে গেছে । আমাকে ছবি অঁাকতে দেখে আমার মা আমাকে একদিন আমার সবুজ খাতাখানি দিয়েছিলেন । আমি কি জানি তখন সে খাতার গুণ ! আর একটু হলেই একটা বিলিতী খবরের কাগজের ছবির সঙ্গে সেটা বদল করেছিলুম আর কি! ভাগ্যি মায়ের চোখে পড়ে ছল, তিনি আমায় কোলে বসিয়ে যখন সেই খাতা থেকে একটির পর একটি ছবি দেখাতে লাগলেন তখন আমি অবাক হয়ে গেলুম। কী রঙ দিয়েই সে সব ছবি লেখা ! বাজারে সে রঙ পাবার যে নেই । প্রথম পাতাতেই লেখা, কমলাপুলির দেশে সকাল হচ্ছে, আকাশে কমলানেবুর রঙ, গাছে-গাছে সোনালি সব ফল ফুল পাখি, তার মাঝে কনকরাজার মেয়ে কপলে গাই দুইতে বসেছে, নদীতে সব সোনালি রঙের হাস মাছ অ র নেীকো ভাসতে-ভাসতে চলেছে, মাঠে মাঠে সোনালি ধানের শিষ বাতাসে ঝিকমিক করে তুলছে, তার মাঝে ছোট্ট একটি রাখাল বঁশি বাজাচ্ছে, রাজকন্যের হরিণ >>>