পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সোনার ছিকলি ছিড়ে সেই দিকে ছুটে চলেছে বাশির গানে ভুলে । আর শেষ পাতায় ফটিক জোছনার দেশে রাজকন্যে ঘুমিয়ে পড়েছেন, নীল আকাশে মস্ত চাদ হিঞ্চেবনের আড়াল থেকে রুপোর থালার মতো দেখা দিয়েছে, আর সেই রাখাল পরানের কাটিটি আস্তে-আস্তে রাজকন্যার বুকে ছুইয়ে দিচ্ছে । এই দুই ছবির মাঝে রয়েছে, কোন্নগড় আঁস্তকুড়ে বেড়াল বসে আছে, খেলাঘরে ছেলেরা ইকড়ি-মিকড়ি খেলছে, হিঙুল গাছে মাদারের ফুল, আঁকড় ফুল বেচ ফুল ফুটে রয়েছে, ট্যাপোর ভিতর সব ঝিঙে ঝুলছে, নটেশাগের গুড়িতে নেজ-ঝোলা পাখি উড়ে বসে চাটিম কলা খাচ্ছে, চালতাতলায় ঝিঝি ডাকছে আর প্যাখন বিবি নাচছেন, সোনার আঁচিলেপাচিলে হড়মবিবি খড়ম পায়ে বেড়িয়ে বেড়াচ্ছেন, আর হলদেগুড়ির মাঠে গামুর-গুমুর ঢোল বাজছে ; চেঙা ক্ষেতে নৈছাগল ঝেঙা ফুল ছিড়ে খাচ্ছে, বন-কাপাশি গাছে নোটন পায়রা ডিমে তা দিচ্ছে, রামছাগল আতাপাত খেতে লেগেছে, মুড়ো নটেগাছের তলায় গালফোলা গোবিন্দর মা বসে-বসে তাই দেখছে, আর চুবড়ি মাথায় দিয়ে ভোম্বল দাস হাটে চলেছে। তারপর বাপ-মায়ের দেশের ছবি —সেখানে পুকুরে পানকৌড়ি ডুব দিয়ে মাছ ধরছে, বাঁশতলায় বুড়ি শুকনো পাতা ঝাঁট দিচ্ছে, জোড়পুতুলের বিয়ে হচ্ছে, কঁাচনীপাড়ার নাচনী নাচ্ছে, জটাধারী ভিক্ষে চাইছে, “হাতে-পো কাখে পো’ ছেলে ধরে বেড়াচ্ছে, জোয়ান গুরু জোড়া-বেত হাতে বসে, গোয়ালের শোভা নেহাল বাছুর হামা দিচ্ছে, শিবসদাগর অগ্রদ্বীপে বাণিজ্য করতে চলেছেন, ভাত-ৰ্কাছনে ফেউয়ার মা ছেলে ঘুম পাড়াচ্ছে, আর মাসি-পিসি বনগায়ে বসে খয়ের মোয়া পাকাচ্ছেন। ময়রাবুড়ে৷ সন্দেশ খাচ্ছে, কামারশালে হাতুড়ি পড়ছে ঠকাঠক, খাটের খুড়ে নলের ছকে নিয়ে তাজপুকুরের ঘাটে চুপটি করে বসে আছেন, কানকাটার মা তার কান চুলকে দিচ্ছে, রামের বঁাশিতে তুলো জড়িয়ে। রামতুলসীতলায় ছুখপাসরা নয়নতারার পিদিম জলছে, আর ভুড়োশেয়ালী অন্ধকার থেকে মুখ বাড়িয়ে সেদিকে চেয়ে আছে ; মন্দিরে ১২০