পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পুতুর বই ছাতের উপর থেকে শহরের বাড়িঘর দেখে ভাবছ কী ? দিনের বেলায় শহরের এই যে হাজার-হাজার ইটের বাড়ি তার কলের চিমনি দেখছ, রাত নয়টার তোপ যেমন পড়বে, সব অমনি বাগান আর বাজার, মাঠ আর পুকুর হয়ে যাবে। থাকবার মধ্যে থাকবে রাজার কেল্লা, রায়মশায়দের বৈঠকখানা আর এই জোড়সঁাকে আর এই তেতলা বাড়ি। বিশ্বাস হচ্ছে না ? ভাবছ আমি বাজে কথা বলছি ? আচ্ছা সকালবেল পুবদিকের আকাশে লাল রঙের একটা ফানুস দেখতে পাও, সাদা ফানুস থাকে না তো ? রাত্তিরে দেখে দিকি, সেখানে সাদা একটা ফানুস বুলছে দেখবে, আবার সেটা কখনো দেখাবে রুপোর বাটি যেন কাত হয়ে পড়েছে, কখনো বা দেখবে যেন একখানি নৌকো ভাসছে। তবু বিশ্বাস হচ্ছে না ? আচ্ছা দিনের বেলায় আকাশে নীলরঙ, পাখি আর মেঘ, এ ছাড়া কিছু তো দেখ না, রাতের বেলায় আকাশে দেখ, সব তারা ফুটেছে দেখবে। এ যদি হতে পারে, তবে আর রাত হলেই শহরটা বাগান হতে পারবে না কেন ? ছুপুর রাতে ভূতের ভয়ে ছাতে উঠতে পার না, তাই বল, না হলে দেখতে পেতে, সব বাড়ি ঘর জুয়োর কোথায় মিলিয়ে গেছে, কেবল চারদিকে সব সারি-সারি আলোর নিশেন ঝুলছে, চৌকো, লম্বা, চওড়া, সরু, তর-বেতর । আর কেবল রাজার বাড়ির চুড়ো, রায়মশায়দের বৈঠকখানার বারাগু, আর আমাদের চিলের ছাতটা একটু-একটু দেখা যাচ্ছে, আর কিছু নেই। পুকুরে সব ব্যাঙ করর করর করছে, বনে-বনে বিঝি ঝিম-ঝিম করছে। খানিক রাত পর্যন্ত একটু একটু ঢোলের আওয়াজ কিংব। একটু-একটু মানুষের গলা শোনা যায়, তারপর সব চুপ। ১২৮