পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নাক তুলে বললে –‘আর তুমি ভাবছ দিন চারেকে কৈলাস-পর্বতে যাবা —এই পিপড়ার মতো সরু-সরু ঠ্যাং চালিয়ে ? যদি দিন রাত চলে যাতি পার, তথাপি চার-বছরে তুমি সেহানে পৌছতি পার কিনা সন্দেহ। এই আমতলি, ইহার পর জামতলি, তেঁতুলতলি, বটতলি –অমনি পর-পর কত যে গ্রাম তার ঠিকানা মেলে না ; তারপর নদীর ধারে এ নগর, সে নগর ; উপনদীর ধারে সকল উপনগর ; তৎপরে এ-ঘাট, ও-ঘাট, সে-ঘাট ; এ-মাঠ, ও-মাঠ, সে-মাঠ ; এ-বন, ও-বন, সে-বন ; তাহার পর উপত্যক, উপত্যক বাদ পাহাড়তলি, তৎপরে চিত্রকুট, পরেশনাথ, চন্দ্রনাথের পাহাড়পর্বত ; তাহার পর বিন্ধ্যাচল, তাহার পর সীমাচল তবে হিমাচল । তৎপরে রামগিরি, তাহার পরে ধবলাগিরি, তৎপরে মানস-সরোবর, উহার ওধারে তিববত, আরো ওধারে কৈলাস-পর্বত। এই নদ নদী পাহাড়-জঙ্গল ভাংতি-ভাংতি সেহানে যাওয়া গঙ্গা-ফড়িংটির-প্রায়তোমার কর্ম ৷ পক্ষী-রাজ-ঘোড়া যে, সেও সেহানে যাতি পারে না চার হস্তায়, তুমি তো তুমি ! ঘরের ছেলে ঘরে গিয়া বৈস থাহ ; কৈলাসের আশা ছাড়ি দ্যেও ।” রিদয় বললে –‘আমি যেখানে যাব বলে বেরিয়েছি সেখানে যাবই ? গুগলীও বললে –‘আমিও যেহানে যাত্রা করি বাইরেচি, এই বেন্ধোকালে, সেহেনে গঙ্গাসাগরে না যাইয়া আমি ছাড়মুনি।’ ঠিক সেই সময় খোড়া-হাস পুকুর থেকে ছপছপ করে উঠে এসে টুপ করে গুগলীটিকে খেয়ে মাঠের দিকে চলল। রিদয় তাকে শুধোলে –‘কোথায় যাওয়া হচ্ছে ? ‘মানস-সরোবর !" বলে হাস হেলতে-তুলতে আগুয়ান হল। রিদয় দেখলে বড়ো সুবিধে, মানস-সরোবর পর্যন্ত হাসের সঙ্গে যাওয়া যাবে; তারপর তিববত, তারপরেই কৈলাস । সে আর কোনো কথা না বলে তার মা মুবচনী-ব্রত করতে যে খোড়া হাসা পুষেছিলেন, তারি সঙ্গে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল। వb