পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/২১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গেলে বন পারে, নদী পাবে, আকাশ থেকে নেমে দু’দও বসে জিরোতে পাবে —এমন সব যাবার রাস্তা তারা বেছে নেয়। এর উপরে আকাশ দিয়ে মেঘ চলাচল করছে ; জলে-ধোয়ায়-ঝাপসা এই সব মেঘের রাস্ত কাটিয়ে পাখিদের চলতে হয় ; না-হলে ডান ভিজে ভারি হয়ে, কুয়াশায়, ধোঁয়ায় দিক ভুল হয়ে, একদিকে যেতে আর-এক-দিকে গিয়ে পড়বে। এমনি সব নানা ঝনকট বাতাসের পথে আছে ; কাজেই পাখিদের মধ্যে পাকা মাঝারি মতো সব দলপতি-পাখি থাকে। পাণ্ডারা যেমন দলে-দলে যাত্রী নিয়ে তীর্থ করাতে চলে, তেমনি এরাও ভালো-ভালো রাস্তার খবর নিয়ে দলেদলে নানা পাখি নিয়ে আনাগোনা করে —উত্তর থেকে দক্ষিণে, দক্ষিণ থেকে উত্তরে, পুব থেকে পশ্চিমে, পশ্চিম থেকে পুবে, সমুদ্র থেকে পাহাড়ের দিকে, পাহাড় থেকে সমুদ্রের দিকে, পৃথিবীর একধার থেকে আর-একধারে নানা-দেশে নানা-স্থানে । মানুষ যখন একদেশ থেকে আর-একদেশে চলে, সে নিজের সঙ্গে খাবার, জিনিস-পত্তর গুছিয়ে নিয়ে চলে। খুব যে গরীব, এমন কি সন্ন্যাসী সেও এক লোটা, এক কম্বল, খানিক ছাতু, ছোলা, আটা, দুটো মোয়া, নয়তো তুমুঠো মুড়িও সঙ্গে নেয়; কিন্তু পাখিদের এখান থেকে কিছু খেয়ে নিয়ে, সেখানে নেমে, সেখানে কিছু খেয়ে নিয়ে —এমনি খানিক পথ উড়ে, খানিক আবার ডাঙায় কিংবা জলায়, কোথাও বা চরে, ঘাটে-ঘাটে জিরিয়ে খেয়ে-দেয়ে না নিলে চলবার উপায় নেই। বাচ্ছাদের জন্যে দূর থেকে পাখিরা মুখে করে, গলার থলিতে ভরে খাবার আনে ; আর টিয়ে পাখি ঠোটে ধানের শিষ, হাস পদ্মফুলের ডাটা নিয়ে সময়-সময় এদিকে-ওদিকে উড়ে চলে বটে, কিন্তু দল-বেঁধে যখন তারা পাণ্ডার সঙ্গে দূর-দূর দেশে যাত্রা করে বেরোয় তখন কুটোটি পর্যন্ত সঙ্গে রাখে না –একেবারে ঝাড়া-ঝাপট হালকা হয়ে উড়ে যায়। রেলগাড়ি যেমন দেশ-বিদেশের মধ্য দিয়ে বাশি দিতে-দিতে স্টেশনে-স্টেশনে নতুননতুন লোক ওঠাতে-ওঠাতে চলে, এই পাখির দলও তেমনি আকাশ

e a