পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/২১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিয়ে ডাক দিতে-দিতে চলে ; আর এ গ্রাম সে-গ্রাম এ-দেশ সেদেশ এ-বন ও-বন থেকে যাত্রী-পাখি সব উড়ে গিয়ে ঝাকে মিশে আনন্দে মস্ত-এক দল বেঁধে চলতে থাকে। আকাশ দিয়ে একটার পর একটা ডাকগাড়ির মতো সারাদিন এমনি দলে-দলে যাতায়াত . করে ডাক-হাক দিতে-দিতে –হাস, বক, সারস, পায়রা, টিয়া, শালিক, ময়না, ডাহুক-ডাহুকী—ছোটাে বড়ো নানা পাখি । খোড়া হাসের সঙ্গে মানস-সরোবরে যাবার জন্যে রিদয় ঘর ছেড়ে মাঠে এসে দেখলে নীল আকাশ দিয়ে দলে-দলে বক, সারস, বুনোহাস, পাতিহাস, বালুর্হাস, রাজহাস সারি দিয়ে চলেছে। এই সব পাখির দল পুবে সন্দ্বীপ থেকে ছেড়ে আমতলির উপর দিয়ে ছভাগ হয়ে, এক ভাগ চলেছে —গঙ্গাসাগরের মোহান ধরে গঙ্গাযমুনার ধারে-ধারে হরিদ্বারের পথ দিয়ে হিমালয় পেরিয়ে মানসসরোবরে ; আর-একদল চলেছে —মেঘনানদীর মোহানা হয়ে আমতলি, হরিংঘাট, গঙ্গাসাগর বায়ে ফেলে, আসামের জঙ্গল, গারো-পাহাড় খাসিয়া-পাহাড় ডাইনে রেখে, ব্রহ্মপুত্র নদের বাকেবঁাকে ঘুরতে-ঘুরতে হিমালয় পেরিয়ে তিব্বতের উপর দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা ধবলাগিরির উত্তর-গা ঘেষে সিধে পশ্চিম-মুখে মানসসরোবরে । সমুদ্রের দিক থেকে গঙ্গাসাগরের পথ পশ্চিম-উত্তর হয়ে হিমালয় পেরিয়ে পুবে ঘুরে পড়েছে মানস-সরোবরে ; আর ব্রহ্মপুত্রের পথ উত্তর-পূব হয়ে পশ্চিম ঘুরে শেষ হয়েছে মানসসরোবরে –যেন বেড়ির দুই মুখ একটি জায়গায় গিয়ে মিলেছে। এই বেড়ির মিলের কাছে রয়েছে সুন্দর-বন আর আমতলি ; মাঝখানে অন্নপূর্ণার অন্নপাত্র মুজলা-সুফলা সোনার বাঙলা-দেশ ; ডাইনে আসাম ; বায়ে বেহার অঞ্চল । সুবচনীর খোড়া হাস রিদয়ের সঙ্গে মাঠে বেরিয়ে প্যাক-প্যাক করে আপনার মনেই বকতে-বকতে চলল –‘উ: বাবারে । আর যে চলতে পারিনে। পা ছিড়ে পড়ছে! কেন এলুম গো, মরতে ঘর থেকে বেরিয়েছিলুম! এতদুরে মানস-সরোবর কে জানে গে। —এ্যঃ ! So>