পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাল থেকে হাসেরা পাহাড়ের ওপারে নিজের-নিজের দেশের দিকে রওনা হবে, দেশের কথা ছাড়া আজ আর কারু মুখে অন্য কথা নেই। আকাশে মেঘ করেছে, বিষ্টি নেই, কেবল ঠাও। হাওয়া, আর শীতালু বাতাস। মাথার উপর দিয়ে দলে-দলে পাখি হু হু করে উত্তরমুখে চলেছে –সবাই দেশে যেতে ব্যস্ত, তার ওপর এ-বছর পাখিদের বারোয়ারি পড়েছে। কুঁচেবুক কুঁচিবক তারা বারোয়ারির নেমস্তন্ন করতে বেরিয়েছে, যার সঙ্গে দেখা হচ্ছে চেচিয়ে জানাচ্ছে পুন্নিমার দিনে বারোয়ারিতে যেতে হবে, ভারি জলসা। চকা নিমন্ত্রণ পেয়ে ভারি খুশি, রিদয়কে বললে –তোমাদের দুজনের কপাল ভালো, বারো বছর অন্তর কৈলাস-পর্বতের ধারে মানস-সরোবরে এই বারোয়ারির মজলিস হয়, সেখানে সারসের নাচ, হরিণ-দৌড়, আর্গিন-পাখির কনসার্ট, গাঙ-শালিকের গীত, ছুচোর কেওন, শেয়ালের যুক্তি, মেড়ার লড়াই, ভালুক-নাচ, সাপ-বাজি, মাছের চান, এমনি আরো কত কী হবে তার ঠিকানা নেই ! ব্রহ্মার হাস কর্মকর্তা, স্বয়ং পশুপতি হবেন সভাপতি, পৃথিবীর পশুপক্ষী সেখানে হাজির হবে । মানুষের কপালে এমন আশ্চর্য কারখানা দেখা এ-পর্যন্ত ঘটেনি, কোথায় লাগে তোমাদের হরিদ্ধারের কুম্ভমেলা! আর পাহাড়ের ওধারে আমাদের দেশটা কী চমৎকার তোমায় কী বলব, পালতি জলা –যেটা ব্রহ্মার হাস আর পৃথিবীর জলচর পাখি, কী পোষ কী বুনো সবাইকার আডড, সেটা যে কত বডে ত কেউ জানে না, উত্তরের সমস্ত নদী সমস্ত পাহাড় এসে সেইখানেই শেষ হয়ে আবার সব নতুন-নতুন নাম নিয়ে দক্ষিণ দিকে নেমে এসেছে। এই পালতির উত্তর গায়ে ঢোলা পর্বত, সেই ঢোলা পর্বতের ওপারে পাচিলে ঘেরা চীন মুল্লুক, তারো ওধারে বরফের দেশের ধারে ‘তন্দ্রী’ বলে একটা দেশ । বছরে প্রায় দশ মাস সেখানে বরফের চাদর মুড়ি দিয়ে ফুল পাতা নদ নদী সবাই ঘুমিয়ে থাকে, কেবল বসন্তের মাস দুই সেখানে সূর্য দেখা দেন, আর অমনি সারা দেশ ফুলে-ফলে’পাতায়-ঘাসে দেখতে-দেখতে সবুজ হয়ে ওঠে, ৩২৭