পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গয়লাপাড়া আছে, চলুন আপনাকে তাদের গোয়ালে রেখে আসি । একটি বুড়ি গাই তাদের আছে এক ছটাক করে হুধ দেয়, দুধ ভাত সবই সেখানে পাবেন।’ রিদয় শুধোলে –‘আর তোমরা ? বালিহাস লজ্জায় মুখটি নিচু করে রইল। খোড়া চুপি-চুপি রিদয়ের কানে-কানে বললে –‘ভাই, ওরু ডিম পাড়বার সময় হয়েছেঃ দুটো মাস অপেক্ষা করে, তারপর সবাই এক সঙ্গে বাড়ি ফেরা যাবে, এই কটা দিন তুমি কোনো রকমে গৌহাটিতে কাটাও ’ হাসের বাচ্ছা হবে শুনে রিদয় ভারি খুশি, সে একখানা শালপাতার নৌকোতে ভর দিয়ে গয়লাপাড়ার ঘাটে গিয়ে উঠল । গয়লাপাড়া নামেই পাড়া, একঘর বই গয়লা নেই, তাও আবার গয়লা-বুড়ে অনেককাল হল মরেছে, আছে কেবল এক বুড়ি গাই আর এক সুঢ়ি গ্যলানী। গয়লাবাড়ির উঠোনে ঢুকে রিদয় এদিক-ওদিক চাইতে লাগল, ঘুটফুটে আঁধার রাতটা, বাড়ির কোথাও একটি আলো নেই, কোনদিকে গোয়াল কোনদিকে ঢেকিশাল কোথায় বা হেঁসেল কিছুই দেখবার যো নেই, একটা কেবল বেল গাছ ভূতের মতো একে বেকে টেরা-বাকা মোচড়ানো-দোমড়ানো শুকনো ডাল নিয়ে উঠানের মাঝে দাড়িয়ে আছে, আর তার উপবে বসে একটা কালো পেচা কেবলি চে চাচ্ছে —‘যো-মে-র বাড়ি-যাঃ, মাথা খ !" ঝড় উঠল, তার সঙ্গে টিপটিপ বিষ্টি নামল, আরো দুটি পথিক নেউল আর খটাস তাড়াতাড়ি উঠোনে ঢুকে এদিক-ওদিক চাইতেচাইতে রিদয়কে দেখে শুধোলে --"এটা কি গৌহাটির চটি, রাতে থাকবার ঘর পাওয়া যাবে কি এখানে ? রিদয় বললে –‘আমি তো গয়লাবাড়ি বলে এখানে ঢুকেছি কিন্তু অন্ধকারে কিছুই দেখছিনে। এটা গোয়াল কি চটি কি ধর্মশালা বা পাঠশালা কিছুই বোঝা যাচ্ছে না, কারু সাড়াশব্দ পাচ্ছিনে, কেবল একটা পেচা ডাকছিল একটু আগেই শুনেছি।’ ৩৩৫