পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জানতে চাও তো বলি, আমাকে স্থর খুজে খুজে তো গান গাইতে হয় না, সুর আপনি ওঠে আমার মধ্যে, মাটি থেকে লতায় পাতায় রস যেমন করে উঠে আসে, গানও তেমনি করে আমার মধ্যে ছুটে আসে আপনি, জন্মভূমির বুকের রস । পুব আকাশের তীরে সকালটি ফুটি-ফুটি করছে, ঠিক সেই সময় আমার মধ্যে উথলে উঠতে থাকে স্বর ও গান, বুক আমার কাপতে থাকে তারি ধাক্কায়, আর আমি বুঝি, আমি না হলে সরস মাটির এই সুন্দর পৃথিবীর বুকের কথা খুলে বলাই হবে না। সকালের সেই শুভ লগ্নটিতে মাটি আর আমি যেন এক হয়ে যাই, মাটির দিকে আমি আপনাকে নিয়ে ষাই, আর পৃথিবী আমাকে সুন্দর শাখের মতো নিজের নিশ্বেসে পরিপূর্ণ করে বাজাতে থাকে, আমার মনে হয় তখন আমি যেন আর পাখি নই, আমি যেন একটি আশ্চর্য বাশি, যার মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর কান্না আকাশের বুকে গিয়ে বজেছে । অন্ধকারের মধ্যে থেকে ভোর রাতের হিম মাটি এই যে র্কাদন জানাচ্ছে, আকাশের কাছে তার অর্থ কী সোনালিয়া, সে আলো ভিক্ষে করছে, একটুখানি সোনার আলো-মাখা দিন তারি প্রার্থন, ভোর বেলার সবাই কাদছে, দেখবে, আলো চেয়ে, গোলাপের কুঁড়ি সে অন্ধকারে কাদছে আর বলছে, আলো দিয়ে ফোটাও । ওই যে খেতের মাঝে একটা কাস্তে চাষার ভুলে এসেছে, সে ভিজে মাটিতে পড়ে মরচে ধরে মরবার ভয়ে চাচ্ছে আলো, একটু আলো এসে যেন রামধনুকের রঙে চারি দিকের ধানের শিষ রাঙিয়ে দেয় । নদী কেঁদে বলছে, আলো আসুক, আমার বুকের তলা পর্যন্ত গিয়ে আলো পড়ুক। সব জিনিস চাচ্ছে যেন আলোয় তাদের রঙ ফিরে পায়, আপনার আপনার হারানো ছায়া ফিরে পায়, তারা সারারাত বলছে, আলো কেন পাচ্ছি নে, আলো কী দোষে হারালেম । আর আমি কুঁকড়ে তাদের সে কান্না শুনে কেঁদে মরি, আমি শুনতে পাই ধান খেত সর কাদছে, শরতের আলোয় সোনার ফসলে ভরে ওঠবার জন্তে, রাঙা, মাটির পথ সব কাদছে, যারা চলাচল 8ፃ