পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গেল, ধরা পড়ল। তবে আজ আমিই-বা লুকিয়ে থাকি কেন আপনাকে না জানিয়ে। ব’লে কুঁকড়ো আর একবার চারি দিক দেখে বললেন, ‘আলোর ফুলকি, আলোর ফুল আকাশে ফোটে কেন তা জানো ? আমি গান গাই বলে।’ প্রথমটা সবাই থ হয়ে গেল, তার পর একেবারে হাসির-হুল্লোড় উঠল, ‘পাগল ! পাগল।’ কুঁকড়ে বলে উঠলেন, ‘সবাই হাসছ তো ’ ব’লেই হাক দিলেন, ‘সামাল জোয়ান সামাল |’ লড়াই শুরু হয়ে গেল। তখনো সবাই হাসছে, কী মজা, উনি গান গেয়ে আকাশে আলো জ্বালান, কী আপদ- । কুঁকড়ো বাজখাই মোরগের এক প্যাচ সামলে বললেন, ‘হঁ। আমিই সূর্যের রথ রোজকে রোজ টেনে আনি । তার পরেই কুঁকড়োকে বাজখাই এক ঘা বসালে; তার পর আর-এক ঘ, আরএক ঘা । সবাই চারি দিক থেকে চিৎকার করতে লাগল, ‘বাহবা বাজখ, চালাও, জোরসে ভাই ? কুঁকড়োর মুখে চোখে ঘা পড়ছে আর সবাই চেঁচাচ্ছে, ‘খুব হুহ, বহুত আচ্ছা, জেসাকে তেস, ইয়েঃ মারা। ওদিকে কুঁকড়োও বলে চলেছেন, ‘আমিই আলো আনি, সকাল আনি, আলো, আলো, আলো । কুকুর চেঁচাচ্ছে, ‘হঁ। ই ’ সোনালি কাদছে চোখ ঢেকে আর সব পাখি তারা বলে চলেছে হাততালি দিয়ে, চালাও বাজখাই চোচ, আওর এক লাথ তুণ্ডমে, বাহবা বাজখ, খুব লড়ত, ইয়ে এক ঘা, উয়োঃ দে ঘাও, মারা মারা।’ রাজ্যের পাখির গালাগালি হাসি টিটকিরির মধ্যে কুঁকড়ে এক এক পা করে ক্রমে মরবার দিকে এগিয়ে চলেছেন। র্তার বুক বেয়ে রক্ত পড়ছে, গায়ের পালক সব ছিড়েখুড়ে চারি দিকে উড়ছে, চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে, মনে হচ্ছে পৃথিবী যেন ঘুরছে কিন্তু তবু তিনি যুঝছেন। কিন্তু শক্তি ক্রমেই কমছে। এই সময় তার মোরগফুলের উপরে বাজখ। এমন এক ঘা বসিয়ে দিলে যে কুঁকড়ে অসান হয়ে বসে পড়লেন। অমনি চারি দিকে সবাই চেচিয়ে উঠল, ‘বাহব। কী বাহবা । ঘায়েল হুয়া, ঘায়েল ক্রয়া ।” ৭৬