পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেই সময় বাপ্পা আর একবার সেই গায়নী-নগরে ফিরে এলেন। গায়নী-নগর দেখে বাপ্পার সেই দুটি ভাই-বোন গায়েব-গায়েবীর গল্প মনে পড়ল । বাপ্পাদিত্য সেই সূর্যকুণ্ডের জলে সূর্য-পূজা করে গায়নীর রাজপ্রাসাদে শ্বেতপাথরের শয়ন-মন্দিরে বিশ্রাম করতে গেলেন । হঠাৎ অর্ধেক রাত্রে কার একটি মধুর গান শুনতে-শুনতে বাপ্পার ঘুম ভেঙে গেল। তিনি শয়নমন্দির থেকে পাথরের ছাদে বেরিয়ে দাড়ালেন । সম্মুখে মুসলমানদের প্রকাণ্ড মসজিদ জ্যোৎস্নার আলোয় ধপধপ করছে। আকাশে আধখানি চাদ ; চারিদিক নিশুতি । বাপ্পা জ্যোৎস্নার আলোয় দাড়িয়ে গান শুনতে লাগলেন । তার মনে হল, এ গান যেন কোথায় শুনেছেন ! হঠাৎ দক্ষিণের হাওয়ায় গানের কথা আরো স্পষ্ট হয়ে বাপ্পার কানের কাছে ভেসে এল ; বাপ্পা চমকে উঠে শুনলেন– “আজ কী আনন্দ ! কুলত ঝুলনে শুামর চন্দ – এ যে সেই গান ! নগেন্দ্রনগরে রাজপুত-রাজকুমালীর ঝুলন গান ! বাপ্পা ছাদের উপর ঝুকে দাড়ালেন ; নিচে দেখলেন এক ভিখারিণী রাস্তায় দাড়িয়ে গাইছে— ‘তাজি কী আনন্দ ! বাপ্পা তৎক্ষণাৎ সেই ভিখারিণীকে ডেকে পাঠালেন । সেই চাদের আলোয় নির্জন শ্বেতপাথরের ছাদে পথের ভিখারিণী রাজ্যেশ্বর বাপ্পার সম্মুখে এসে দাড়াল। বাপ্পা জিজ্ঞাসা করলেন– ‘কে তুমি ? তুমি কি নগেন্দ্রনগরের শোলাঙ্কি-রাজকুমারী ? তুমি কি কখনো ঝুলনপূর্ণিমায় এক রাখাল-বালককে বিয়ে কবেছিলে ? ভিখারিণী অনেকক্ষণ একদৃষ্টে বাপ্পার মুখের দিকে চেয়ে রইল, তারপর একটুখানি হেসে বললে – ‘মহারাজ, অর্ধেক-রাত্রে ভিখারিণীকে ডেকে এ কী তামাশ!! বাপ্পা বললেন– “তবে কি তুমি রাজকুমারী নও?’ ভিখারিণী নিঃশ্বাস ফেলে বললে— ‘আমি একদিন রাজকুমারী ছিলাম বটে, আজ ভিখারিণী। মহারাজ আমি মুসলমান নবাব সেলিমের কন্যা! একদিন পনেরো বৎসর বয়সে তুমি আমাদের রাজ্য কেড়ে নিয়েছিলে, সেদিন আমি এই রাজপ্রাসাদের এই ছাদের উপর থেকে 総8