পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হলেন। বিপদ যে এত গুরুতর, তা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। আল্লাউদ্দীন তৎক্ষণাৎ শিবির উঠাতে হুকুম দিলেন। সেই রাত্রে পাঠান-ফৌজ রাজস্থান ছেড়ে কাশ্মীরের মুখে চলে গেল। তেরো বৎসর পরে, চিতোরের সম্মুখে পাঠান-বাদশার রণডঙ্কা, আর একবার বেজে উঠল। তখন চিতোরের বড় দুরবস্থা। সমস্ত দেশ দুর্ভিক্ষে, মহামারীতে উজাড় হয়ে যাচ্ছে— দেশ প্রায় বীরশন্ত : নতুন নতুন লোকের হাতে যুদ্ধের ভার। রানা ভীমসিংহ সেই সব নতুন সৈন্য নতুন সেনাপতি নিয়ে গ্রামে-গ্রামে পথে-পথে, পাঠান সৈন্তকে বাধা দিতে লাগলেন ; কিন্তু তার সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হল । যুদ্ধের পর যুদ্ধে রাজপুতদের হটিয়ে দিয়ে, গ্রামের পর গ্রাম, কেল্লার পর কেল্লা দখল করতে-করতে একদিন আল্লাউদ্দীন চিতোরের সম্মুখে এসে উপস্থিত হলেন। বাদশাহী ফৌজ চিতোরের দক্ষিণে পাহাড়ের উপর গড়বন্দী তাবু সাজিয়ে, রাজপুতের সঙ্গে, শেষ যুদ্ধেব জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। এবার প্রতিজ্ঞ, চিতোরেব কেল্ল। ভূমিসাৎ না করে দিল্লী ফের নয়। মলিন মুখে রানা ভীমসিংহ চিতোর-গড়ে ফিরে এলেন। মহারান লক্ষ্মণসিংহ রাজসভায় ভীমসিংহকে ডেকে বললেন, কাকাজি, এত দিনে বুঝি চিতোরগড় পাঠানের হস্তগত হয়, আর উপায় নেই! প্রজাসকল হাহাকার করছে, সমস্ত দেশ ছভিক্ষে উজাড় হয়ে যাচ্ছে, তার উপর এই বিপদ উপস্থিত। এখন কী নিয়ে, কাকে নিয়েই বা লড়াই করি ? ভীমসিংহ বললেন, চিতোর এখনো বীরপূন্ত হয়নি, এখনো আমরা একবৎসর পাঠানের সঙ্গে যুদ্ধ চালাতে পারি, এমন ক্ষমতা রাখি!’ লক্ষ্মণসিংহ ঘাড় নাড়লেন, কাকাজি, আর যুদ্ধ বৃথা ! আমি বেশ বুঝতে পারছি, পাঠানের সঙ্গে সন্ধি না করলে আর রক্ষা নেই ; তবে কেন এই দুর্ভিক্ষের দিনে সমস্ত দেশ-জুড়ে যুদ্ধের আগুন জ্বালাই ? সমস্ত প্রজা আমার মুখের দিকে চেয়ে আছে! আমার ক্ষতিতে রাজ্যে যদি শান্তি আসে, যদি আগুন নিভে যায়, তবে পাঠানের সঙ্গে সন্ধি করায় ক্ষতি কী ? 為》や