পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজছত্র ধরে চলল, জয়ঢাক বাজতে বাঁজতে চলল, আর সর্বশেষে প্রিয়সখা মাধব্য এক খোড়া ঘোড়ায় হটুইট্‌ করে চললেন। ক্রমে রাজা এ-বন সে-বন ঘুরে শেষে মহাবনে এসে পড়লেন। গাছে গাছে ব্যাধ র্যাদ পাততে লাগল, খালেবিলে জেলে জাল ফেলতে লাগল, সৈন্য সামন্ত বন ঘিরতে লাগল— বনে সাড়া পড়ে গেল । গাছে গাছে কত পাখি, কত পাখির ছানা পাতার ফঁাকে ফঁাকে কচি পাতার মতো ছোটে ডান নাড়ছিল, রাঙা ফলের মতো ডালে ফুলছিল, আকাশে উড়ে যাচ্ছিল, কোটরে ফিরে আসছিল, কিচমিচ করছিল। ব্যাধের সাড়া পেয়ে, বাসা ফেলে, কোটর ছেড়ে, কে কোথায় পালাতে লাগল । মোষ গরমের দিনে ভিজে কাদায় পড়ে ঠাণ্ড হচ্ছিল, তাড়া পেয়ে— শিং উচিয়ে ঘাড় বেঁকিয়ে গহন বনে পালাতে লাগল। হাতি শুড়ে করে জল ছিটিয়ে গা ধুচ্ছিল, শালগাছে গা ঘষছিল, গাছের ডাল ঘুরিয়ে মশ তাড়াচ্ছিল, ভয় পেয়ে— শুড় তুলে, পদ্মবন দলে, ব্যাধের জাল ছিড়ে পালাতে আরম্ভ করলে। বনে বাঘ হাকার দিয়ে উঠল, পর্বতে সিংহ গর্জন করে উঠল, সারা বন কেঁপে উঠল। কত পাখি, কত বরা, কত বাঘ, কত ভালুক, কেউ জালে ধরা পড়ল, কেউ ফাদে বাধা পড়ল, কেউ বা তলোয়ারে কাটা গেল ; বনে হাহাকার পড়ে গেল। বনের বাঘ বন দিয়ে, জলের কুমির জল দিয়ে, আকাশের পাখি আকাশ ছেয়ে পালাতে আরম্ভ করলে । ফঁাদ নিয়ে ব্যাধ পাখির সঙ্গে ছুটল, তীর নিয়ে বীর বাঘের সঙ্গে গেল, জাল ঘাড়ে জেলে মাছের সঙ্গে চলল, রাজা সোনার রথে এক হরিণের সঙ্গে ছুটলেন । হরিণ প্রাণভয়ে হাওয়ার মতে রথের আগে দৌড়িয়েছে, সোনার রথ তার পিছনে বিদ্যুতের বেগে চলেছে। রাজার সৈন্য-সামন্ত, হাতি, ঘোড়, প্রিয়সখা মাধব্য, কতদূরে কোথায় পড়ে রইল। কেবল রাজার রথ আর বনের হরিণ নদীর ধার দিয়ে, বনের ভিতর দিয়ে, মাঠের উপর দিয়ে ছুটে চলল। যখন গহন বনে এই শিকার চলছিল তখন সেই তপোবনে সকলে 이