পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রণমল্পকে ভয় করে একটি কথা কইতেন না, তারা আজ এই দাইকে মনে-মনে তার সাহসের জন্তে তারিফ না করে থাকতে পারলেন না । রণমল্ল সেদিন মাথা হেঁট করে রাজসভা থেকে বিদায় হলেন । চণ্ডের ছোটো ভাই রঘুবীর, কিন্তু মেবারের সবাই তাকে নাম দিয়েছিল রঘুদেব – রূপে গুণে তিনি ছিলেন বাস্তবিকই দেবতার মতো । নগরের বাইরে রাজ্যের গোলমাল থেকে অনেক দূরে একখানি সুন্দর বাগানঘেরা ছোটোখাটো পাথরের বাড়ি, তারই মধ্যে রঘুদেব একলা রাজার ছেলে হয়ে তপস্বীর মতো দীন দুঃখী কাঙাল নিয়ে থাকতেন। তার মুখের কথা— সে যেন ছোটে-বড়ো সবার মন গলিয়ে গানের মতো গিয়ে প্রাণে বাজত। রাজো তার শক্র ছিল না – এমন-কী যে মহারানী চণ্ডকে বিষ-দৃষ্টিতে দেখতেন তিনিও রঘুদেবকে গুরুর মতো ভক্তি, ভায়ের মতো ভালোবাসা দিয়েছিলেন । আর মকুল – সে ছোড়দাদার মুখের গল্প, তার সেই বাগানে ফল পেড়ে বনভোজন, গাছের পাখিদের বাসার খুব কাছে গিয়ে তাদের ছোটো ছোটো ছানাগুলিকে খাইয়ে আসা, গাছের ছায়ায় বসে বঁাশের বঁাশিতে রাখাল ছেলেদের কাছ থেকে গান শেখ, এই সব আনন্দের কথা কখনো ভুলবে না। চণ্ড গিয়ে অবধি সে তার ছোড়দার কাছে যাবার জন্তে রোজ কাদছে, রানীর ইচ্ছে তাকে কিছুদিনের জন্যে সেখানে পাঠিয়ে দেন কিন্তু রণমল্ল কেবলি বাধা দিচ্ছেন। রানী একবার রঘুদেবকে রাজবাড়িতেই না হয় আনবার কথা বললেন কিন্তু তাতেও আপত্তি ! শেষে একদিন রণমল্ল স্পষ্টই বলে দিলেন যে, তার হুকুম ছাড়া রঘুদেবের সঙ্গে দেখা কিংবা তাকে এখানে আনানো হতে পারবে ন – রানীর সেইদিন চোখ ফুটল ; তিনি বুঝলেন, রাজ্যের কাজে তার আর কোনো হাত নেই, এই পাথরের রাজবাড়ির চারখানা দেওয়ালের মধ্যে তিনি তার মকুল দুজনকে বন্দীর মতো থাকতে হবে । ჯ\)8