পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তারিফ শুনে তার আর আপসোসের সীমা রইল না ! সে ভেবেছিল ওই রঙ করবার পাতাগুলো খেয়ে সবাই মাথা ঘুরে মরবে কিন্তু দেখলে সবাই দিবিব পেট ভরিয়ে আরামে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমতে লেগেছে, কেবল শীতের রাতে খিদের জ্বালায় সে-ই মরছে কেঁপে । শীতের রাত সহজে কাটতে চায় না, রাধুনী ঠাকুরটিকে অনেক যন্ত্রণা দিয়ে তবে সে রাত পোহাল । সকালে উঠে সে একখানা কুড়ুল নিয়ে রান্নার কাঠ কাটতে চলেছে এমন সময় একজন বুড়ে মাড়োয়ারী সেপাইয়ের সঙ্গে দেখা ; পাহাড়ের ঝরনার ধারে সে হাত-মুখ ধুচ্ছে, তার দাড়ি-গোফ সব লাল রঙের ছোপ-ধরা। কাল সন্ধ্যায় যার দাড়ি ছিল শাদা, আজ লাল হয়ে গেল । এ ব্যাপার দেখে রাধুনী ঠাকুরটি আর হাসি রাখতে পারলে না, হোঃ-হোঃ করে হাসতে-হাসতে সঙ্গীদের কাছে এই মজার খবরট দিতে এসে দেখে যত পাকা দাড়ি গোফওয়াল ছিল তার নিজের-নিজের দাড়িতে হাত বোলাচ্ছে আর এ ওর মুখের দিকে চেয়ে দেখছে সবার দাড়ি-গোফে -লাল রঙের ছোপ । ইতিমধ্যে রাজর্ষি বেরিয়ে এলেন, তার কিন্তু শাদ দাড়ি ধবধব করছে। মুজপাতার যে রঙ লেগেছে এটা কারুর মনে এল না ; দাড়িতে রক্ত কোথা থেকে লাগল এই ভেবে সবার যখন ভয়ে মুখ শুকিয়ে এসেছে তখন রাজবি সবাইকে অভয় দিলেন, ‘নির্ভয়ে থাকে, তোমাদের সুখের সূর্য উদয় হতে আর দেরি নেই ; দেখো না এখনি তার রাঙা আলো তোমাদের মুখে এসে পড়েছে ; এখন কিছুদিন এইখানে বিশ্রাম করে, তোমাদের রাজত্ব ফিরে পাবার বন্দোবস্ত করা যাবে ’ সেইদিন কাঠ কেটে রাধুনী ঠাকুর রাজৰ্ষিকে আর এক বোঝা মুজপাতা এনে দিয়ে বললে, ঠাকুর, আমাকে আজ একটু সেই তরকারি রোধে দিতে হবে।’ রাজর্ষি হেসে বললেন, ‘তোমার কালো দাড়িতে লাল রঙের ছোপ তো খুলবে না, দাড়ি আগে পাকুক তবে একদিন মুজশাকের চচ্চড়ির ছোপ ধরিয়ে দেওয়া যাবে, আজ ভালো করে অন্য তরকারি দিয়ে অতিথি খাওয়াবার বন্দোবস্ত করে ' ›og