পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আর কোনো সাড়াশব্দ নেই ; কেবল দেখছি, একদল কারা জানি না, দেখতে অনেকটা মানুষ আর ঘোড়ার মতে, এদিকে-ওদিকে চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদেরই খুজে-খুজে যারা গান গাইতে এসেছিল। ক্রমে দেখি তারাও মরে গেছে। পৃথিবীতে আর তখন কিছু চলে বেড়াচ্ছে না, গান গাইছে না –কেবল গাছের দল আমরা চুপ করে বসে আছি। আমাদের বয়েস ক্রমে বাড়ছে আর আমরা বুড়ো হচ্ছি। তখন জলে মাছ দু-একটি দেখা দিয়েছে ; আমি কাট। আর বড়শি ফেলে এক রাত্তিরে মাছ ধরছি এমন সময়—’ বলেই মনসাবুড়ে ঝিমিয়ে পড়ল ! আমি যত বলি, এমন সময় কী হল দাদা ? আবার বুঝি সেই ফড়িংদের মতো মানুষগুলো ঝিঝিপোকা হয়ে ফিরে এসে গান গাইছে দেখলে ? দেখলে বুঝি সেই মানুষের মতো ঘোড়াগুলো ভূত হয়ে অন্ধকার থেকে মুখ বাড়িয়ে তাদের গান শুনতে এল ?’ বুড়োর আর কথা নেই ; কেবল একবার হু বলেই চুপ করলে। আমি ভাবছি দিই আর-এক ঘা মাঠি বুড়োর মাথায় বসিয়ে, এমন সময় দেখি দূর থেকে একটা আলো আসছে –যেন কে লণ্ঠনহাতে আমার দিকে চলে আসছে। একবার ভাবছি বুঝি বেহার কজন আলো নিয়ে আমাকে নিতে এল। একবার ভাবছি, কী জানি মাঠের মাঝে আলেয়া দেখা দেয়, তাও তো হতে পারে। কিন্তু দেখলুম আলোটা এসে পালকির খানিক দূরে থামল ; আর চারটে জোয়ান উড়ে আমার পালকিটা কাধে নিলে। উড়েদের একেই একটু ভুতুড়ে চেহারা, কাজেই ঠিক আন্দাজ করতে পারলুম না যে তারা ভূত না মানুষ! একবার তাদের পায়ের দিকে চেয়ে দেখলুম, ভূতের মতো তাদের পায়ের গোড়ালি উলটাে কিনা। কিন্তু অন্ধকারে কিছু ঠিক করতে পারা গেল না। মনসাবুড়োকে ডেকে বললুম, দাদা, তবে যাচ্ছি। দাদা আমার তখন ঝিমোচ্ছেন ; চমকে উঠে বললেন, যাবে নাকি ? গল্পটা তো শেষ হল না ? २२8