পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করে ডাকতে থাকে, কঁাটাগাছের ফুলের উপরে একটা কালো ভোমরা ভন ভন্‌ করে উড়ে বেড়ায়– একবার জানলার কাছে আসে আবার উড়ে যায়। নালক সেই দিকে চেয়ে থাকে আর ভাবে— আহা, ওদের মতো যদি ডানা পেতাম তবে কি আর মা আমায় ঘরে বন্ধ করে রাখতে পারতেন ? এক দৌড়ে বনে চলে যেভাম। এমন সময়ে গুরু বলে ওঠেন— ‘লেখরে লেখ, অমনি বনের পাখি উড়ে পালায়, তালপাতার উপরে আবার খস-খস করে ছেলেদের কলম চলতে থাকে। নালক যে কি কষ্টে আছে তা সেই জানে ! হাত চলছে না, তবু পাতাড়ি-লেখা বন্ধ করবার জো নেই, কান্না আস্থক তবু পড়ে যেতে হবে— য র ল শ ষ স– বাদলের দিনেও, গরমের দিনেও, সকালেও, দুপুরেও । নালক পাঠশালা থেকে মায়ের হাত ধরে যখন বাড়ি ফেরে, হয়তো শালগাছের উপরে তালগাছগুলোর মাথা তুলিয়ে পুবে-হাওয়া বইতে থাকে, বঁাশঝাড়ে কাকগুলো ভয়ে কা-কা করে ডেকে ওঠে । নালক মনে-মনে ভাবে আজ যদি এমন একটা ঝড় ওঠে যে আমাদের গ্রামখানা ঐ পাঠশালার খোড়ে চালটাস্বদ্ধ একেবারে ভেঙে-চুরে উড়িয়ে নিয়ে যায়, তবে বনে গিয়ে আমাদের থাকতেই হয়, তখন আর আমাকে ঘরে বন্ধ করবার উপায় থাকে না। রাতের বেলায় ঘরে বাইরে বাতাস শন-শন বইতে থাকে, বিদ্যুতের আলো যতই ঝিকমিক চমকাতে থাকে, নালক ততই মনে-মনে ডাকতে থাকে— ঝড় আসুক, আস্থক বৃষ্টি ! মাটির দেয়াল গলে যাক, কপাটের খিল ভেঙে যাক ! ঝড়ও আসে, বৃষ্টিও নামে, চারি দিক জলে-জলময় হয়ে যায় ; কিন্তু হায়! কোনোদিন কপাট ও খোলে না, দেয়ালও পড়ে না— যে বন্ধ সেই বন্ধ ! খোলা মাঠ, খোলা আকাশে ঘেরা বর্ধনের সেই তপোবনে নালক আর কেমন করে ফিরে যাবে ? যেখানে পাখিরা আনন্দে উড়ে বেড়ায়, হরিণ আনন্দে খেলে বেড়ায়, গাছের তলায় মাঠের বাতাসে যেখানে ধরে রাখবার কেউ নেই— সবাই ইচ্ছামতো খেলে বেড়াচ্ছে, উড়ে বেড়াচ্ছে । ২৯২