পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সে বাতাসে আনন্দে বুক তুলে উঠছে, মনের পাল ভরে উঠছে। মনোরথ আজ ভেসে চলেছে নেচে চলেছে— সারি-গানের তালেতালে মুখসাগরের থির জলে । স্বপ্নের ফুলেব মতো শুকতারাটি আকাশ থেকে চেয়ে রয়েছে – পুথিবীর দিকে । সুখের আলো ঝরে পড়েছে, মুখের বাতাস ধীরে বইছে— পুবে পশ্চিমে উত্তরে দক্ষিণে । মনে হচ্ছে— আজি অসুখ যেন দূরে পালিয়েছে, অসোয়াস্তি যেন কোথাও নেই, জগৎসংসার সবই যেন, সবাই যেন আরামে রয়েছে সুখে রয়েছে শাস্তিতে রয়েছে । এমন সময় পর্দা সরিয়ে দিয়ে সুখের স্বপন ভেঙে দিয়ে সিদ্ধার্থের চোখের সামনে ভেসে উঠল একটা পাঙাশ মূর্তি— জরে জর্জর, রোগে কাতর। সে দাড়াতে পারছে না— ঘুরে পড়ছে। সে চলতে পারছে না– ধুলোর উপরে, কাদার উপরে শুয়ে রয়েছে। কখনো সে শীতে কঁপিছে, কখনো-বা গায়ের জ্বালায় সে জল-জল করে চিৎকার করছে। তার সমস্ত গায়ের রক্ত তার চোখ-দুটো দিয়ে ঠিকরে পড়ছে। সেই চোখের দৃষ্টিতে আকাশ আগুনের মতে রাঙা হয়ে উঠেছে। সমস্ত গায়ের রক্ত জল হয়ে তার কাগজের মতো পাঙাশ, হিম অঙ্গ বেয়ে ঝরে পড়ছে । তাকে ছুঁয়ে বাতাস বরফের মতো হিম হয়ে যাচ্ছে । সে নিশ্বাস টানছে যেন সমস্ত পুথিবীর প্রাণকে শুষে নিতে চাচ্ছে । সে নিশ্বাস ছাড়ছে যেন নিজের প্রাণ, নিজের জ্বালা-যন্ত্রণা সারা সংসাবে ছড়িয়ে দিযে যাচ্ছে। সিদ্ধার্থ দেখলেন, সংসাবের আলো নিবে গেছে, বাতাস মরে গেছে, সব কথা সব গান চুপ হযে গেছে। কেবল ধুলো-কাদা-মাখা জ্বরের সেই পাঙাশ মূরি বুকের ভিতর থেকে একটা শব্দ আসছে— কে যেন পাথরের দেয়ালে হাতুড়ি পিটছে— ধ্বক, ধ্বক ! তাবি তালে তালে আকাশের সব তারা একবার নিবছে একবার জলছে, বাতাস একবার অসিছে একবার যাচ্ছে । জ্বরের সেই ভীষণ মূর্তি দেখে সিদ্ধা ঘরে এসেছেন, রাজঐশ্বর্যের মাঝে ফিরে এসেছেন, সুখসাগরের ঘাটে ফিরে এসেছেন, woo S