পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হাজার-হাজার মর-মানুষ কাধে নিয়ে, কোলে করে, বুকে ধরে । তাদের পা মাটিতে পড়ছে কিন্তু কোনো শব্দ করছে না, তাদের বুক ফুলে-ফুলে উঠছে বুকফাটা কান্নায়, কিন্তু কোনো কথা তাদের মুখ দিয়ে বার হচ্ছে না। নদীর পারে— যেদিকে সূর্য ডোবে, যেদিকে আলো নেবে, দিন ফুরিয়ে যায়— সেইদিকে দুই উদাস চোখ রেখে হনহন করে তারা এগিয়ে চলেছে মহা শ্মশানের ঘাটের মুখে-মুখে, দূরে-দূরে, অনেক দূরে— ঘর থেকে অনেক দূরে, বুকের কাছ থেকে কোলের কাছ থেকে অনেক দূরে— ঘরে আসা, ফিরে আসা, বুকে আসা, কোলে আসার পথ থেকে অনেক দূরে— চলে যাবার পথে, ছেড়ে যাবার পথে, ফেলে যাবার কঁাদিয়ে যাবার পথে । த এপারে ওপারে মরণের কান্না আর চিতার আগুন, মাঝ দিয়ে চলে যাবার পথ– কেঁদে চলে যাবার পথ, কাদিয়ে চলে যাবার পথ । থেকে-থেকে গরম নিশ্বাসের মতো এক-একটা দমকা বাতাসে রাশিরাশি ছাই উড়ে এসে সেই মরণ-পথের যত যাত্রীর মুখে লাগছে, চোখে লাগছে! সিদ্ধার্থ দেখছেন ছাই উড়ে এসে মাথার চুল শাদা করে দিচ্ছে, গায়ের বরণ পাঙাশ করে দিচ্ছে! ছাই উড়ছে— সব-জ্বালানো, সব-পোড়নে গরম ছাই ! আগুন নিবে ছাই হয়ে উড়ে চলেছে, জীবন ছাই হয়ে উড়ে চলেছে, মরণ– সেও ছাই হয়ে উড়ে চলেছে । মুখ ছাই হয়ে উড়ে যাচ্ছে, দুঃখ ছাই হয়ে উড়ে যাচ্ছে, সংসারের যা-কিছু যত-কিছু সব ছাই ভস্ম হয়ে উড়ে চলেছে দূরে-দূরে, মাথার উপরে খোলা আকাশ দিয়ে পাঙাশ একখানা মেঘের মতো । তারি তলায় বুদ্ধদেব দেখলেন– মরা ছেলেকে দুই হাতে তুলে ধরে এক মা একদৃষ্টিতে র্তার দিকে চেয়ে আছেন— বাতাস চারিদিকে কেঁদে বেড়াচ্ছে — হায় হায় হায় রে হায়! সেদিন ঘরে এসে সিদ্ধার্থ দেখলেন, তার সোনার পুষ্পপাত্রে ফুটন্ত পদ্ম ফুলটির জায়গায় রয়েছে একমুঠো ছাই, আর মর-মানুষের আধপোড়া একখানা বুকের হাড় । আজ সে বরফের হাওয়া ছুরির মতো বুকে লাগছিল। শীতের \එං8