পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আসন বুনে নদীর জলে সেখানি ঠাণ্ড করে সিদ্ধার্থকে দেবার জন্য এসেছে। সিদ্ধার্থ তখনো বটতলাতে আসেননি। সোয়াস্তি কুশাসনখানি বেদীর উপর বিছিয়ে দিয়ে মনে-মনে সিদ্ধার্থকে প্রণাম করে নদীপারে চলে গেল । তখন সন্ধ্যা হয়-হয় ; সিদ্ধার্থ অঞ্জনায় স্নান করে সোয়াস্তির দেওয়া কুশাসনে এসে বসলেন । জলে-ধোয়া কুশঘাসের মিষ্টি গন্ধে র্তার মন যেন আজ আরাম পেয়েছে। পূর্ণিমার আলোয় পৃথিবীর শেষ-পর্যন্ত আজ যেন তিনি দেখতে পাচ্ছেন– স্পষ্ট, পরিস্কার । পাথরের বেদীতে কুশাসনে বসে সিদ্ধার্থ আজ প্রতিজ্ঞা করলেন, এ শরীর থাক আর যাক, দুঃখের শেষ দেখবই-দেখব— সিদ্ধ না হয়ে, বুদ্ধ না হয়ে এ আসন ছেড়ে উঠছি না। বজ্রাসনে অটল হয়ে সিদ্ধার্থ আজ যখন ধ্যানে বসে বললেন— ইহাসনে শুন্যতু মে শরীরং ত্বগস্থিমাংসং প্রলয়ঞ্চ যাতু অপ্রাপ্য বোধিং বহুকল্পদুর্লভাং নৈবাসনাৎ কায়মতশ্চলিষ্যতে ’ তখন মার’— যার ভয়ে সংসার কম্পমান, যে লোককে কুবুদ্ধি দেয়, কুকথা বলায়, কুকর্ম করায়— সেই মার’-এর সিংহাসন টলমল করে উঠল। রাগে মুখ অন্ধকার করে 'মার আজ নিজে আসছে মার-মার শব্দে বুদ্ধের দিকে। চারি দিকে আজ মার’-এর দলবল জেগে উঠেছে। তারা ছুটে আসছে, যত পাপ, যত দুঃখ, যত কালি, যত কলঙ্ক, যত জ্বালাযন্ত্রণ, মলা আর ধুলা— জল-স্থল-আকাশের দিকে-বিদিকে ছড়িয়েছড়িয়ে। পূর্ণিমার আলোর উপরে কালোর পর্দা টেনে দিয়েছে— ‘মার ! সেই কালোর ভিতর থেকে পূর্ণিমার চাদ চেয়ে রয়েছে— যেন একটা লাল চোখ ! তা থেকে ঝরে পড়ছে পৃথিবীর উপর আলোর বদলে রক্ত-বৃষ্টি ! সেই রক্তের ছিটে লেগে তারাগুলে। নিবে-নিবে যাচ্ছে । ○》ぬ