পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করিতেছিল সেদিনও সে নিমেষমাত্র নিজের কাজ বন্ধ করিল না – হাত তাহার যেমন চলিতেছিল তেমনি চলিল। দিন শেষে কারুশিল্পীরা যখন কাজ বন্ধ করিয়া গেল তখন সে অতি শাস্ত এবং গম্ভীরভাবে বড়ো দেউলের সূত্রপাতের খোটা মায় সূত্র, সজোরে উপড়াইয়া, একদিকে টানিয়া ফেলিল এবং পরম নিশ্চিন্ত মনে কুটিরের ঝাপ বন্ধ করিয়া নিদ্রা গেল । কাণ্ডট রাজমন্ত্রীর অগোচর রহিল ন । এবং এটাও তিনি বেশ বুঝিলেন যে ভয় প্রদর্শনে, অর্থদানে, এমন-কি, বল-প্রয়োগে এই নগণ্য চর্মকার বশীভূত হইবার নহে। রাজমন্ত্রী স্বয়ং গিয়া সাধ্যসাধনা করিলেন, কিন্তু চর্মকার অটল! সে প্রতিজ্ঞ করিয়া পসিয়াছে যে এমন অবিচার সে কিছুতেই ঘটিতে দিবে না । সে স্পষ্টই বলিয়া দিল— “তোমরা রাজ কে বলে। গিয়া আমি ঘর ছাড়িতেছি না।” রাজমন্ত্রী রাজার ভাবগতিক বেশ বুঝিতেন ; সুতরাং ব্যাপারটা রাজগোচরে নিবেদন করিতে তিনি বড় ব্যস্ত ছিলেন না । কিন্তু কুটিল রাজনীতির সমস্ত মারপ্যাচ প্রয়োগ করিয়াও যখন দেখিলেন সেই চর্মকারের দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তাহারই হাতের জত-পাটির সূচাগ্রভাগের মতে উদ্ধতভাবে খাড়াই রহিল, তখন রাজমন্ত্রী নালিশটা রাজগোচরে আনিতে বাধ্য হইলেন । এবং এটাও তিনি রাজাকে জানাইয়া দিলেন যে রাজনীতির সমস্ত প্রয়োগগুল। এই অপবিত্র জুতার পাটিটাকে দমন করিতে সমর্থ হয় নাই ; সুতরাং এবার দণ্ডনীতির সাহায্য লওয়া প্রয়োজন । ঠিক চর্মকারের বাস্তুভিটার উপরেই ত্রিভুবনেশ্বরের রত্নপীঠের স্থাপনা হইবে এবং সেই পুণ্য-বলে তাহার সাতপুরুষের স্বৰ্গলাভের সুনিশ্চিত সম্ভাবনা সত্ত্বেও চর্মকার কেন যে নিজের ও নিজ বংশপরম্পরার ভাবী মঙ্গল সম্বন্ধে একেবারে অন্ধ হইয়া আছে এটা রাজা ছাড়া রাজসভার আর কেহ বঝিল কিনা সন্দেহ । সুতরাং অপরের ভূমি অপহরণ করিয়া স্বকমের অনুষ্ঠান করিতে ইতস্তত ○8、○