পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পর্বতটির মতে বসন্তের দিনে বাসস্তী ফুলের সাজে সেজে অপূর্ব শোভা বিস্তার করেছেন ; আপনার যশের সৌরভ পেয়ে দিগ দিগন্ত থেকে দেখুন কত মধুকর এসে গুণগান করছে আজ আপনার চারিদিকে আনন্দে হর্ষের মধুবৃষ্টি করে! আর আমি ওই হিমাচলটির মতো যে শীতে সেই শীতেই ঘেরা রয়েছি এখনো ? রাজা বললেন– “তবে কে বড়ো হল কবি ? হিমাচল, না এই ক্রীড়া-পর্বতটি ? কবি বললেন— ‘ক্রীড়া-পর্বতটি বসন্তের হর্ষবর্ধন, ফুল-ফলের ঐশ্বর্ষে, ছায়ার মহিমায় বড়ো ; আর হিমাচলটি কায়ায় যেমন, তেমনি দুঃখেও বড়ো, মহারাজ। শীত ওর আর যাবার নয় দেখছি।’ মহারাজ কিছুদিন যুবরাজের হাতে রাজ্যভার দিয়ে বিশ্রাম করছেন গরমের দিনে ; কাথাখানা চার পাট করে স্বন্ধে রেখে কবি উপস্থিত বিষম রৌদ্রে খোলা মাথায় । হর্ষবর্ধন বলে উঠলেন— “এতদিনে শীত দূর হল কবিবরের ? মাতৃগুপ্ত উত্তর করলেন– ‘মহারাজ, শীত একটু অবসর নিয়েছে বটে, কিন্তু দারুণ গ্রীষ্মকে এই হতভাগা কবিটিকে পুড়িয়ে মারবার জন্যই রেখে গেছে। শীতের আমলে কেবল কেঁপেই মরতেম, কিন্তু এ-আমলে হৃৎকম্প আর স্বেদ তুইই হচ্ছে ; মড়ার উপর খাড়ার ঘ পড়ছে মহারাজ ।” রাজা মৃত্যু হেসে বললেন– “কবিবর, এই কথাটি স্কন্ধে না রেখে ওটির মায়া ত্যাগ করে যদি আমার হাতে সঁপে দাও, তবে ওটি দিয়ে তোমার জন্তে এমন একটি ছাতা বানিয়ে দিতে পারি বেশ বড়োগোছের, যার ছায়ায় তুমি সুখে থাকতে পারবে ? মহারাজের সামনে কবি সেই শতকুটি কাথা বিছিয়ে তার উপরে বসে বললেন– “দুঃখের দিনের সম্বল এই কাথা দিনে-রাতে শীতেগ্রীষ্মে কাজ দিচ্ছে এখনো । এমন-কি, প্রয়োজন হলে মহারাজেরও পদধূলি মুছে নেওয়া কিংবা সিংহাসনের গদির আর এক-পুরু খোলসও করা যায় একে দিয়ে একদিন । কিন্তু ছাতা হলে এই ৩৭০