এমনি করে রাত কাটল। ছোটোরানীর সোনার পালঙ্কে, ফুলের বিছানায়, রাজার পাশে রাত কাটল; আর বড়োরানীর জলে ঝড়ে, ভাঙা ঘরে, ছেঁড়া কাঁথায় রাত কাটল।
সকাল হল। রাজবাড়িতে প্রহরীখানায় প্রহর বাজল, নাকরাখানায় নবৎ বাজল, রাজারানীর ঘুম ভাঙল।
রাজা সোনার ভৃঙ্গারে স্ফটিকজলে মুখ ধুয়ে, রাজবেশ অঙ্গে পরে, রাজ-দরবারে নেবে গেলেন। আর ছোটোরানী সোনার পালঙ্কে, ফুলের বিছানায়, ফুলের পাখায় হাওয়া খেতে খেতে পাশ ফিরে ঘুম গেলেন।
আর বড়োরানী কী করলেন?
ভাঙা ঘরে সোনার রোদ মুখে পড়ল, রানী উঠে বসলেন। এদিক দেখলেন ওদিক দেখলেন, এপাশ দেখলেন, ওপাশ দেখলেন— বানর নেই! রানী এ-ঘর খুঁজলেন ও-ঘর খুঁজলেন ঘরের চাল খুঁজলেন, গাছের ডাল খুঁজলেন— বানর নেই! বড়োবানী কাঁদতে লাগলেন।
বানর কোথা গেল?
বানর ভাঙা ঘরে ঘুমন্ত রানীকে একলা রেখে রাত না-পোহাতে রাজ-দরবারে চলে গেল।
রাজা বার দিয়ে দরবারে বসেছেন। চারিদিকে সভাসদ মন্ত্রী, দুয়ারে সিপাই-সান্ত্রী, আশে-পাশে লোকের ভিড়। রানীর বানর সেই লোকের ভিড় ঠেলে, সিপাই-সান্ত্রীর হাত এড়িয়ে, রাজার পায়ে প্রণাম করে বললে— মহারাজ, বড়ো সুখবর এনেছি, মায়ের আমার ছেলে হবে।
রাজা বললেন— ওরে বানর বলিস কী? এ কথা কি সত্য? বড়োরানী দুওরানী তার ছেলে হবে? দেখিস এ কথা যদি মিথ্যা হয় তো তোকেও কাটব আর তোর মা দুওরানীকেও কাটব।
বানর বললে— মহারাজ, সে ভাবনা আমার। এখন আমায় খুশি কর, আমি বিদায় হই।
রাজা গলার গজমোতি হার খুলে দিয়ে বানরকে বিদায় করলেন।
৩৩