পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তারপর দুজনে মিলে পচিশ গজ ভাঙনের গায়ে— পাতলা একখানি মেঘের মতো শাদা শ্বেতপাথরের সেই বারাণ্ডায় বসে মহারাজের মুখে যুদ্ধের গল্প শুনব । মাঝে-মাঝে পুষ্পবতী দেখতেন সেই বল্লভপুরের রাস্তার বহুদূরে একটি বল্লমের মাথা ঝকমক করে উঠত ; তারপর কালো ঘোড়াব পিঠে বল্লভপুরের রাজদূত দূর থেকে হাতের বল্লম মাটির দিকে নামিয়ে অন্তঃপুরের বারাণ্ডায় রাজরানী পুষ্পবতীকে প্রণাম কবে তীরবেগে চন্দ্রাবতীর সিংহদ্বারের দিকে চলে যেত । যেদিন দাসীর হাতে মহারাজ শিলাদিত্যের চিঠিপুষ্পবতীব কাছে আসত, পুষ্পবতী সেদিন সমস্ত কাজ ফেলে শূন্যের উপরে সেই বারাণ্ডায় মহারাজার সেই চিঠি হাতে বসে থাকতেন । সেই আনন্দের দিনে যখন কোনো বুড়ো জাঠ গান গেয়ে মাঠেব দিকে যেতে-যেতে, কোনো রাখাল বালক পাহাড়ের নিচে ছাগল চরাতে চরাতে, চন্দ্রাবতীর রাজকুমারীকে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করত, তখন পুষ্পবর্তী কারে হাতে এক ছড়া পান্নার চিক, কারে হাতে-বা একগাছা সোনার মল ফেলে দিতেন । রাজকুমারীর প্রসাদ মাথায় ধরে হাজার-হাজার আশীৰ্বাদ করতেকরতে সেই সকল রাজভক্ত প্রজা সকালবেলায় কাজে যেত : সন্ধ্যাবেলায় সেই রাজদূত কালো ঘোড়ার পিঠে বল্লম-হাতে মহারানী পুষ্পবতীর চিঠি নিয়ে বল্লভপুরের দিকে ফিরে যেত। পুষ্পবতী নিস্তব্ধ সন্ধ্যায় পাহাড়ে-পাহাড়ে কালো ঘোড়ার ক্ষুরেব আওয়াজ অনেকক্ষণ ধরে শুনতে পেতেন— কখনো কোনো বুড়ে। জাঠের মেঠো গান আর সেই সঙ্গে রাখাল বালকের মিষ্টি সুব সন্ধ্যার হাওয়ায় ভেসে আসত ! তারপর বিন্ধ্যাচলের শিখরে বিন্ধ্যবাসিনী ভবানীর মন্দিরে সন্ধ্যাপূজার ঘোর ঘণ্টা বেজে উঠত, তখন পুষ্পবর্তী মহারাজের সেই চিঠি খোপার ভিতর লুকিয়ে রেখে পাটের শাড়ি পরে দেবীর পূজায় বসতেন ; আর মনে-মনে বলতেন—হে মা চামুণ্ডে, হে মা ভবানী, মহারাজকে তালোয়-ভালোয় যুদ্ধ থেকে ফিরিয়ে আনে । ৬৬