পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধনুঃশর দেখিয়ে বললেন– “পিতা, বিদেশে এরাই আমার সহায়, আর আছেন একলিঙ্গজী : ব্রাহ্মণ তখন আনন্দে দুই হাত তুলে আশীৰ্বাদ করলেন– “যাও বৎস, তুমি রাজার ছেলে, রাজারই মতে ধনুঃশর হাতে পেয়েছ ! আমি বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ আশীৰ্বাদ করছি— পুথিবীর রাজা হও। যদি কেউ তোমার পরিচয় চায়, তবে গলার কবচ খুলে দেখিয়ে দিও কোন পবিত্র বংশে তোমার জন্ম, তোমার পূর্বপুরুষেরা কোন রাজসিংহাসন উজ্জল করে গেছেন ! যাও বৎস, সুখে থাক ? ব্রাহ্মণের কাছে বিদায় হয়ে বাপ্পা ভীলনীদিদির কাছে বিদায় নিতে চললেন কিন্তু সেখানে বিদায় নেওয়া ততটা সহজ হল না । অনেক কাদাকাটার পর ভীলনীদিদি বললেন— বাপ্পা রে, যদি যাবি তবে তোর দুই ভাই— বালিয় ও দেবকে সাথে নে ওরে বাপ্পা, তোকে এক ছেড়ে দিতে প্রাণ আমার কেমন কেমন করে যে ” তারপর তিনজনের হাতে তিন-তিনখানি পোড়া রুটি দিয়ে ভীলনীদিদি তিনটি ভাইকে বিদায় করলেন । বালিয় ও দেবকে সঙ্গে নিয়ে বাপ্পা গহন বনে চলে গেলেন। সেখানে বড়ো-বড়ো পাথরের থামের মতো প্রকাণ্ড-প্রকাণ্ড গাছের গুড়ি আকাশের দিকে ঠেলে উঠেছে, কোথাও ময়ুর-ময়ূরী বন আলো করে উড়ে বেড়াচ্ছে ; কোথাও আস্ত ছাগল গিলে প্রকাণ্ড একটা অজগর স্থির হয়ে পড়ে ; কোথাও বাঘের গর্জন, কোথাও বা পাখির গান ; এক জায়গায় সবুজ ঘাসে সোনাব বোদ, তার-জায়গায় কাজলের সমান নীল অন্ধকার । বালিয় ও দেবকে সঙ্গে নিয়ে বাপ্পা কখনো বনের মনোহর শোভা দেখতে দেখতে, কখনো মহা-মহা বিপদের মাঝখান দিয়ে ভগবতী ভবানীর খাড়া হাতে নির্ভয়ে চললেন । সেই প্রকাণ্ড পরাশর অরণ্য পার হতে র্তার তিন দিন, তিন রাত কেটে গেল ; রাজপুত্র বাপ্পা সেই তিন দিন তিনখানি পোড়া রুটি খেয়ে কাটিয়ে দিলেন । তারপর গ্রামের পর গ্রাম, দেশের পর দেশ পার হয়ে, কত বর্ষ, কত শীত, পথে-পথে কাটিয়ে, বাপ্পা মেবারের মৌর্যবংশীয় রাজা মানের রাজধানী চিতোর নগরে উপস্থিত হলেন । ما عb