পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মনের কথা যে-খা তার সঙ্গে ভাব হল না, তার পাতায় ভালো লেখাও চলল না। এই খাতাটা অনেকদিন কাছে-কাছে রয়েছে, ভাব হয়ে গেল এটার সঙ্গে। ভাব হল যে-মানুষের সঙ্গে কেবল তাকেই বলা চলল নিজের কথা স্থখ-দুঃখের । আমার ভাব ছোটোদের সঙ্গে– তাঁদেরই দিলেম এই লেখা খাত। আর যারা কিনে নিতে চায় পয়সা দিয়ে আমার জীবন-ভরা স্থখ-দুঃখের কাহিনী, এবং সেটা ছাপিয়ে নিজেরাও কিছু সংস্থান করে নিতে চায় তাদের আমি দুব থেকে নমস্কার দিচ্ছি। যারা কেবল শুনতে চায় আপন কথা, থেকে থেকে যার কাছে এসে বলে ‘গল্প বলো', সেই শিশু-জগতের সত্যিকার রাজা-রানী বাদশাবেগম তাদেরই জন্যে আমার এই লেখা পাত ক’খানা। শিশু-সাহিত্য-সম্রাট ধারা এসেছেন এবং আসছেন তাদের জন্যে রইল বঁ হাতে সেলাম ; আর ডান হাতের কুর্নিশ রইল তাদেরই জন্যে যারা বসে শোনে গল্প রাজা-বাদশার মতে, কিন্তু ছেড়া মাদুর নয়তো মাটিতে বসে ; আর গল্পের মাঝে মাঝে থেকে থেকে যারা বকশিশ দিয়ে চলে একটু হাসি কিম্ব একটু কান্না ; মান-পত্রও নয়, সোনার পদকও নয় ; হয় একটু দীর্ঘশ্বাস, নয় একটুখানি ঘুমে-ঢোল চোখের চাহনি ! ওই তারা— যারা আমার মনের সিংহাসন আলো করে এসে বসে, তাদেরই আদাব দিয়ে বলি, গরীব পরবর সেলামং—অব, আগাজ, কিলেকা করত। হু, জেরা কান দিয়ে কর শুনে । ছাপা হবে হয়ত বইখানা । একদিন কোনো বেরসিক অল্প দামে কিনে নেবে আমার সার-জীবন খুঁজে খুঁজে পাওয়া যা কিছু সংগ্রহ। এইটে মনে পড়ে যখন, তখন হাসি পায় । বলি, এ কি হয় কখনো ? সব কথা কি কেউ জানতে পারে, না জানাতেই পারে কোনো কালে ? অনেক কথা রয়ে যাবে, অনেক রইবে না, এই হবে, তার বেশি নয় । একটা শোনা-কথা বলি। তখন বাড়িতে প্ল্যানচিট, চালিয়ে ভূত নামানে চলছে। দাদামশায়ের পার্ষদ দীননাথ ঘোষাল প্ল্যানচিটে এসে হাজির। বড়ে জ্যাঠামশায় তাকে জেরা শুরু করলেন—পরকালটা এবং পরকালটার বৃত্তান্ত শুনে নিতে চেয়ে। প্ল্যানচিটে উত্তর বার হল—‘যে-কথা আমি মরে জেনেছি, সে-কথা বেঁচে থৈকে ফাকি দিয়ে জেনে নেবে এ হতেই পারে না।’ W. Sly