পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মালিক। প্রায় শতাধিক বছর আগেকার কথা। মা তার বুড়ি হয়ে গেছেন, বুড়ি মার শখ হল, একদিন ছেলেকে বললেন, বাবা, বৃন্দাবন দেখব। আমাকে বৃন্দাবন দেখালি নে ! ছেলে পড়লেন মহা ফাপরে— এই বুড়ি মা, বৃন্দাবনে যাওয়া তো কম কথা নয়, যেতে যেতে পথেই তো কেষ্ট পাবেন । তখনকার দিনে লোকে উইল করে বৃন্দাবনে যেত। আর যাওয়া আসা, ও কি কম সময় আর হাঙ্গামার কথা, যেতে আসতে দু-তিন মাসের ধাক্কা । তা, ছেলে আর কী করেন, মার শখ হয়েছে বৃন্দাবন দেখবার ; বললেন, আচ্ছ মা, হবে । বৃন্দাবন তুমি দেখবে। ছেলে করলেন কী এখন, লোকজন পাঠিয়ে পাণ্ড পুরুত আনিয়ে সেই বাগানটিকে বৃন্দাবন সাজালেন। এক-একটা পুকুরকে এক-একটা কুণ্ড বানালেন, কোনোট রাধাকুণ্ড, কোনোটা শু্যামকুণ্ড, কদমগাছের নিচে বেদী বাধলেন । পাণ্ড বোষ্টম বোষ্টমী দ্বারপাল, মায় শুকশারী, নানা রকম হরবোলা পাখি সব ছাড়া গাছে গাছে, ও দিকে আড়াল থেকে বহুরূপী নানা পাখির ডাক ডাকছে, সব যেখানে যা দরকার। যেন একটা স্ট্রেজ সাজানো হল তেমনি করে সব সাজিয়ে, বৃন্দাবন বানিয়ে, মাকে তো নিয়ে এলেন সেখানে পাত্ত্বি বেহার দিয়ে । বুড়িমা তো খুব খুশি বৃন্দাবন দেখে। সব কুণ্ডে স্নান করলেন, কদমগাছ দেখিয়ে ছেলে মাকে বললেন, এই সেই কেলিকদম্ব যে-গাছের নীচে কৃষ্ণ বঁাশি বাজাতেন । এই গিরিগোবর্ধন । এই কেশীঘাট । রাখাল-বালক সাজিয়ে রাখা হয়েছিল, তাদের দেখিয়ে বললেন, ওই সব রাখাল-বালক গোরু চরাচ্ছে । এটা ওই, ওটা ওই। বোষ্টম-বোষ্টমীদের গান, ঠাকুরদেবতার মূর্তি, এ-সব দেখে বুড়ির তো আনন্দ আর ধরে না। টাকাকড়ি দিয়ে জায়গায় জায়গায় পেন্নাম করছেন, ওদেরই লোকজন সব সেজেগুজে বসে ছিল, তাদেরই লাভ। বৃন্দাবন দেখা হল, যাবার সময় হল । বুড়ি বললেন, আচ্ছা বাবা, শুনেছি বৃন্দাবন এক মাস যেতে লাগে, একমাস আসতে লাগে, তবে আমাকে তোমরা এত তাড়াতাড়ি কী করে নিয়ে এলে । ছেলে বললেন, ও-সব ব্যবস্থা করা ছিল মা, সব ব্যবস্থা করা ছিল। পচিশপচিশটে বেয়ারা লাগিয়ে দিলুম পান্ধিতে, হু-হু করে নিয়ে এল তোমাকে । এ কী আর যে-সে লোকের আসা ! > ●●