পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একেবারে রাতের অন্ধকারের মতে কালে ছিল আমার দাসী— সে কাছে বসেই ঘুম পাড়াত কিন্তু অন্ধকারে মিলিয়ে থাকত লে, দেখতে পেত্তেম না তাকে, শুধু ছোয়া পেতেম থেকে থেকে ! কোনো-কোনো দিন অনেক রাতে সে জেগে বসে চালভাজা কটকট চিবোত, আর তালপাতার পাখা নিয়ে মশা তাড়াত। শুধু শব্দে জানতাম এটা । আমি জেগে আছি জানলে দাসী চুপিচুপি মশারি তুলে একটুখানি নারকেল-নাডু অন্ধকারেই আমার মুখে গুজে দিত— নিত্য খোরাকের উপরি-পাওনা ছিল এই নাডু । খাটে উঠব কেমন করে এই ভয় হয়েছিল ; কাজেই বোধ হচ্ছে উচু পালঙ্কে শোয়া সেই আমার প্রথম । জানি নে তার আগে কোথায় কোন ঘরে আমাকে নিয়ে শুইয়ে দিত কোন বিছানায় সে। চারদিকে সবুজ মশারির আবছায়া-ঘের মস্ত বিছানাটা ভারি নতুন ঠেকেছিল সেদিন— একটা যেন কোন দেশে এসেছি— সেখানে বালিশগুলোকে দেখাচ্ছে যেন পাহাড়-পর্বত, মশারিটা যেন সবুজ কুয়াশা-ঢাকা আকাশ যার ওপারে— এখানে আর মনে করতে হত না, দেখতে পেতেম চিৎপুর রাস্তা থেকে যে সর গলিটা আমাদের ফটকে এসে ঢুকেছে সেটা একেবারে জনশূন্ত । দু’নম্বর বাড়ির গায়ে তখনকার মিউনিসিপালিটির দেওয়া একটা মিটমিটে তেলের বাতি জলছে, আর সেই আলো-আঁধারে পুরোনো শিবমন্দিরটার দরজার সামনে দিয়ে একটা কন্ধ-কাটা দুই হাত মেলে শিকার খুজে খুঁজে চলছে। কন্ধ-কাটার বাসাটাও সেইসঙ্গে দেখা দিত— একটা মাটির নল বেয়ে দু’নম্বর বাড়ির ময়লা জল পড়ে পড়ে খানিকটা দেওয়াল সোতা আর কালো, ঠিক তারই কাছে আধখানা ভাঙা কপাট চাপানে আড়াই হাত একটা ফোকরে তার বাস—দিনেও তার মধ্যে অন্ধকার জমা হয়ে থাকে । সব ভূতের মধ্যে ভীষণ ছিল এই কন্ধ-কাটা, যার পেটট থেকে থেকে অন্ধকারে ই৷ করে আর ঢোক গেলে ; যার চোখ নেই অখচ মস্ত কাকড়ার দাড়ার মতো হাত দুটে যার পরিষ্কার দেখতে পায় শিকার । আর-একটা ভয় আসত সময়ে সময়ে, কিন্তু আসত সে অকাতর ঘুমের মধ্যে— সে নামত বিরাট একটা আগুনের তাটার মতো বাড়ির ছাদ ফুড়ে আস্তে আস্তে আমার বুকের উপর। যেন আমাকে চেপে মারবে এই ভাব— নামছে তো নামছেই গোলাটা, আমার দিকে এগিয়ে আসার তার বিরাম নেই। কখনো আসত