পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বুড়ি বললেন, তা বাবা, বেশ। তবে বৃন্দাবনে তো শুনেছি এ-রকম বাড়ি ঝাড়লণ্ঠন নেই। এ-বাড়ি তো আমাদের বাড়ির মতো । ছেলে বললেন, এ হচ্ছে মা, গুপ্তবৃন্দালন । সে ছিল পুরোনো কালের কথা, সে বৃন্দাবন কী আর এখন আছে, সে লুকিয়েছে। বুড়ি তো খুশিতে ফেটে পড়েন, ছেলেকে দু-হাত তুলে আশীৰ্বাদ করতে করতে বাড়ি ফিরে এসে কেষ্ট পেলেন । সেই থেকে সেই লাগানের নামকরণ হল গুপ্তবৃন্দাবন । সেই গুপ্তবৃন্দাবনে হিন্দুমেলা, আমরা তখন খুব ছোটো । ফি বছরে বসন্তকালে মেলা হয় । যাবতীয় দেশী জিনিস তাতে থাকত । শেষ যেবার আমরা দেখতে গিয়েছিলুম এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে-- বাগানময় মাটির মূতি সাজিয়ে রাখত ; এক-একটি ছোট চাদোয় টাঙিয়ে বড়ে বড়ো মাটির পুতুল তৈরি করে কোনোটাতে দশরথের মৃত্যু, কৌশল্যা বসে কাদছেন, এই-রকম পৌরাণিক নানা গল্প মাটির পুতুল দিয়ে গড়ে বাগানময় সাজানো হত । কী সুন্দর তাদের সাজাত, মনে হত যেন জীবন্ত । পুকুরেও নানা রকম ব্যাপার । কোনো পুকুরে শ্রীমন্ত সওদাগরের নেীকে সওদাগর চলেছেন বাণিজ্যে মযরপঙ্গি নৌকো করে, মাঝিমাল্লা নিয়ে। নৌকোটা আবার চলতও মাঝে মাঝে । কোনো পুকুরে কালীয়-দমন । একটা পুকুরে ছিল— সে যে কী করে সম্ভব হল ভেবেও পাই নে— জল থেকে কমলে কামিনী উঠছে, একটা হাতী গিলছে আর ওগরাচ্ছে । সে ভারি মজার ব্যাপার। পুতুল-এ তীর ওই ওঠানাম দেখে সকলে অবাক । তা ছাড়া কুস্তি হত, রায়বেশে নাচ হত, বাশবাজি খেলা, আরো কত কী । তাদের আবার প্রাইজ দেওয়া হত । এই তো গেল বাইরের ব্যাপার। ঘরের ভিতরেও নানা দেশের নানা জিনিসের একৃজিবিশন— ছবি, খেলনা, শোলার কাজ, শাড়ি, গয়না । মোট কথা, দেশের যা কিছু জিনিস সবই সেখানে দেখানে হত । সন্ধেবেল নানা রকম বৈঠক বসত— কথকতা নাচগান আমোদ-আহ্লাদ সবই চলত। রামলাল চাকর আমাদের ঘরে ঘরে দেখিয়ে নিয়ে বেড়াত। একটা দিল্লির মিনিয়েচার ছিল গোল কাচের মধ্যে, এত লোভ হয়েছিল আমার সেটার জন্য। বেশি দাম বলে কেউ দিলে না কিনে, দু-চারটা খেলনা দিয়েই ভুলিয়ে দিলে। কিন্তু আমি কি আর ভুলি। কী সুন্দর ছিল জিনিসটি, এখনো আমার মনে পড়ে। Y S R