পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেটা এগিয়ে জলন্ত একটা স্তনের মতো একেবারে আমার মুখের কাছাকাছি, বাজ লাগত মুখে চোখে । তার পর আস্তে আস্তে উঠে যেত গোলাটা আমাকে ছেড়ে, হাফ ছেড়ে চেয়ে দেখতেম সকাল হয়েছে– কপাল গরম, জর এসে গেছে আমার। দশ-বারো বছর পর্যন্ত এই উপগ্রহট জরের অগ্রদূত হয়ে এসে আমায় অহস্থ করে যেত। উপগ্রহকে ঠেকাবার উপায় ছিল না কোনো কিন্তু উপদেবতা আর কন্ধ-কাটার হাত থেকে বাঁচবার উপায় আবিষ্কার করে নিয়েছিলেম। লাল শালুর লেপ, তারই উপরে মোড় থাকত পাতলা ওয়াড়, আমি তারই মধ্যে এক-একদিন লুকিয়ে পড়তাম এমন যে, দাসী সকালে বিছানায় আমায় না দেখে— ‘ছেলে কোথা গো' বলে শোরগোল বাধিয়ে দিত । শেষে পদ্মদাসীর পদ্মহস্তের গোটাকয়েক চাপড় খেয়ে জাদুকরের থলি থেকে গোলার মতো ছিটকে বার হতেম আমি সকালের আলোতে । জীবনের প্রথম অংশটায় সকালের লেপের ওয়াড়খান গুটিপোকার খোলসের মতো করে ছেড়ে বার হওয়া আর রাতে আবার গিয়ে লুকোনো লেপের তলায়, আর তারই সঙ্গে জড়িয়ে বাটি, ঝিনুক, খাট, সিন্দুক, তেলের সেজ, পদ্মদাস, এমনি গোটাকৃতক জিনিস, আর শীতের রাতের অন্ধকারে কতকগুলো ভূতের চেহারা, দিনের বেলাতেও অন্ধকারে ঢিল ফেলার মতে কতকগুলো চমকে দেওয়া শব্দ– দরজা পড়ার শব্দ, চাবির গোছার ঝিনঝিন মাত্র আছে আমার কাছে, আর কিছু নেই—কেউ নেই । ১৮৭১ খ্রীস্টাব্দের জন্মাষ্টমীর দিনের বেলা ১২ট, ১১ মিনিট থেকে আরম্ভ করে খানিকট বয়স পর্যন্ত রূপ-রস-শব্দ-গন্ধ-স্পর্শের পুজি— এক দাসী, একখানি ঘরে একটি খাট, একটি দুধের বাটি, এমনি গোটাকতক সামান্য জিনিসের মধ্যেই বদ্ধ রয়েছে । শোওয়া আর খাওয়া এ-ছাড়া আর কোনো ঘটনার সঙ্গে যোগ নেই আমার ! অকস্মাৎ একদিন এক ঘটনার সামনে পড়ে গেলেম একল । ঘটনার প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কা সেটা । তখন সকাল দেড় প্রহর হবে, তিনতলার বড়ো সিড়ির উপর ধাপের কিনারা— যেখানটায় খাচার গরীদের মতে মোটাসোটা শিক দিয়ে বন্ধ করা— সেইখানটায় দাড়িয়ে দেখছি কাঠের সিড়ির প্রকাও প্রকাও ধাপগুলো একটা চৌকোন যেন কুয়োকে ঘিরে ঘিরে নেমে গেছে কোন পাতালে তার ঠিক নেই। এই ধাপে ধাপে ঘূর্ণির মাৰে একটা বড়ে চাতাল। পশ্চিম দিকের একটা খোলা ঘর হয়ে চাতালের Ot