পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এবার প্রাইজ বিতরণ হরে। গোপালবাবু হেডমাস্টার, টাকমাথা, ঘাড়ের কাছে একটু একটু চুল, অনেকট এই এখনকার আমার মতোই ; তবে রঙ তার আরো পরিষ্কার। গম্ভীর মাসুম ; কামিয়ে জুমিয়ে ফিট ফাট হয়ে গলায় চাদর ঝুলিয়ে এসে বসলেন চেয়ারে। ছেলেরা কেউ বুঝুঁক ন-বুকুক এই-সব উপলক্ষে তিনি ইংরেজিতেই বক্তৃত করেন। তিনি তার লম্বা ইংরেজি বক্তৃতা শেষ করলেন। তার পর এইবারে একজন মাস্টার উঠে যারা প্রাইজ পাবে তাদের নাম পড়ে যেতে লাগলেন । ছেলেদের নাম ডাকা হতেই তার টেবিলের • কাছে গিয়ে দাড়ায়, হেডমাস্টারমশায় তাদের হাতে লাল ফিতেয় বাধা প্রাইজ তুলে দেন। এক-একটি প্রাইজ দেওয়া হয় আর আমরা হাততালি দিয়ে উঠি যে যত জোরে পারি। হাততালির ধুম কী ! লাল হয়ে উঠল হাতের তোলে। তবু থামি নি । সেবার অনেকেই প্রাইজ পেলে , তার মধ্যে ভুলু পেলে, সমরদাও একটা পেয়ে গেলেন for good conduct ; চেয়ে চেয়ে দেখি আর ভাবি, এইবার বুঝি আমার নাম ডাকবে, আমাকে এমনি একটা-কিছুর জন্য হয়তে প্রাইজ দিয়ে দেবে। কান পেতে আছি নাম শোনাবার জন্য ; শেষ প্রাইজটি পর্যন্ত দেওয়া হয়ে গেল, কিন্তু আমার কানে আমার নাম আর পৌঁছল না । প্রাইজ-বিতরণ হয়ে গেলে মাস্টার উঠে পড়লেন, ছেলেরা হৈ-হৈ করে বাইরে এল ; আর আমি তখন ষ্ট্র চোখের জলে ভাসছি। ভুলু সাত্ত্বনা দেয়, ‘আরে, তাতে কী হয়েছে, ভালো করে পড়াশুনে কর, সামনের বারে ভালো প্রাইজ ঠিক পাবি তুই । সে কথায় কি মন ভোলে ? না-পাওয়া মণ্ডার জন্য বাচ্চ, বেজিটা যেমন হয়ে থাকে আমারও মনটার তেমনি দশা হয় । চোখের ধারা গড়াতেই থাকে, থামে না আর । শেষে ভুলু বললে, ‘প্রাইজ চাস তুই, এই কথা তো? আচ্ছা এই নে— বলে খাতা থেকে একটুকরো শাদা কাগজ ছিড়ে তাতে খলখল করে কী সব লিখে আমার হাতে দিলে । আমি তাতেই খুশি । কাগজের টুকরোটি যত্নে ভাজ করে পকেটে রেখে চোখের জল মুছে বাড়ি এলেম । বৈঠকখানায় বাবামশায় পিসেমশায় সবাই বসে ছিলেন । বললেন, ‘দেখি কে কী প্রাইজ পেলি । সমরদ তার প্রাইজ লালফিতে-বাধা টিকিটমারা সোনালি বই দেখালেন । আমি বললুম, “আমিও পেয়েছি।’ পিসেমশায় বললেন, কই, দেখি গন্ধীরভাবে পকেট থেকে ভাজকরা শাদা কাগজটুকু বের করে তাদের সামনে মেলে ধরলুম। উলটেপালটে সেটি দেখে তারা হো-হো ›ፃእ»