পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যোতিকাকামশায়ও ছবি আঁকতেন, পোৰ্বট্রেট আঁকবার ক্টোক ছিল তার ; কিন্তু ছবি দেখা তো দূরের কথা, আমরা কি তাদের ঘরে ঢুকতে পেরেছি কখনো ? গানবাজনাও হত। তখনকার দিনে মাইনে-কর গাইয়ে থাকত বাড়িতে । কেষ্ট বিষ্ণু ছিল দুই মাইনে-কর গাইয়ে। দুর্গাপুজোয় আগমনী বিজয় তখন গাইত তারা— শোনে নি কখনো ? ভারি মিষ্ট সে-সব গান । ওস্তাদি গানের মজলিশও বসত বৈঠকখানায় রোজ সন্ধেবেলা । তখনকার নিয়মই ছিল ওই । পাড়াপড়শি বন্ধুবান্ধব আসতেন বৈঠকি গান শুনতে। নটায় তোপও পড়ত, মজলিশও ভেঙে যে যার ঘরে যেতেন। দূর থেকে যেটুকু শুনতুম কিছুই বুঝতুম না তার । তবে হ্যা, গান হত ও-বাড়িতে, তেতলার ছাদে নতুনকাকিমার ঘরে । এক দিকে জ্যোতিকাকামশায় পিয়ানো বাজাচ্ছেন, আর-এক দিকে রবিকা গাইছেনু । সেই অল্পবয়সের রবিকার গল, সে যেমন স্বর তেমনি গান। মাত করে দিতেন চার দিক। এ বাড়ি থেকে শুনতুম আমি কান পেতে। তাই বলি, গান তবু শুনেছি আমি ছেলেবেলায়, কিন্তু ছবি দেখি নি মোটেও। ছবি যা দেখেছি তা আমার ছোটোপিসিমার ঘরে । ছুটির দিন দুপুরবেলা ছোটােপিসিমার ঘরের দরজায় একটু উকিঝুকি মারতেই তার নজরে পড়ি, তিনি ডাকেন, কে রে, অব ? আয় আয় ঘরে আয়। কী স্বন্দর ঘরটি তার। কত-রকমের ছবি ! দেশী ধরনের অয়েল-পেন্টিং। শ্রীকৃষ্ণের পায়েস ভক্ষণ— সামনে নৈবেদ্য সাজিয়ে মুনি চোখ বুজে ধ্যানে বসে আছেন, চুপি চুপি কৃষ্ণ হাত ডুবিয়ে পায়েপটুকু তুলে মুখে দিচ্ছেন, হুবহু কথকঠাকুরের গল্পের ছবি ; শকুন্তলার ছবি— তিনটি মেয়ে বনের ভিতর দিয়ে চলেছে, শকুন্তলা বলে বুঝতুম না, তবে ভালো লাগত দেখতে ; মদনভন্মের ছবি— মহাদেবের কপাল ফুড়ে কাটার মতো আগুন ছুটে বের হচ্ছে ; সরোজিনী নাটকের ছবি ; কাদম্বরীর ছবি – রাজপুত্তর পুকুরধারে গাছতলায় ঘোড়া বেঁধে শিবমন্দিরের দাওয়ায় বসে আছে। কে জানে তখন সেট • কাদম্বরীর ছবি । এমন কত সব ছবি। কেষ্টনগরের পুতুলই-বা কত রকমের ছিল সেই ঘরে। চেয়ে চেয়ে দেখতে বেলা কাটে। মেঝেতে ঢাল-বিছানায় বুকে বালিশ দিয়ে বসে ছোটোপিসিমা পান খান, সেলাই করেন। ও বাড়িতে বেল তিনটের ঘণ্টা পড়ে। গুপিালী চুল বাধার বাক্স, ծե-Ֆ