পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কতকগুলো পর্দা, ঝিলমিল ও চলাফেরার নিয়ম দিয়ে বাড়ির কতক অংশ, পুরোনো বাড়ি ছেড়ে উঠে আসার সঙ্গে সঙ্গেই, অন্দর হিসেবে দেওয়াল কিলমিল ইত্যাদি দিয়ে ঘিরে নিতে হয়েছিল আবরুর জন্যেও বটে, বাসঘরের অকুলানের জন্যেও বটে। এবং সেই পর্দা দেওয়াল ইত্যাদি ওঠার সঙ্গে কতকগুলি জানলা-বন্ধ দরজা-বন্ধ নিয়মও স্বষ্টি হয়ে গিয়েছিল আপনা হতেই। যখন আমি হয়েছি তখন বন্ধ থাকত দক্ষিণের ঝিলমিল তিনতলার, ভোর হতে রাত দশটা নিয়মমতে । দক্ষিণ বারান্দার তিন হাত পাচিল, তার উপর রেমে সবুজ রঙ-মাখানে টানা ঝিলমিল বন্ধ। আর আমি তখন মোটে দুই হাত খাড়াই কিনা সন্দেহ। ড্রপ-সিনের সবুজ পর্দার ওপারে কী আছে জানার জন্যে যেমন একটা কৌতুহল থাকে, তেমনি বাড়ির মনোরম অংশটাকে দেখবার জন্যে একটা কৌতুহল ছিল কি ছিল না, কিন্তু উত্তর দিকটাতেই টানছে এখন মন— যে দিকটাতে জীবন বিচিত্র হয়ে দেখা দেয় খিড়কির ফাঁকে ফাকে । এই খড়খড়ি দেওয়া বাইরের জগতের খিড়কি, এদিকে সকাল বিকেল, যখন তখন, বাড়ির সাধারণ দিক দেখে চলতেম। অষ্টপ্রহর কিছু-না-কিছু হচ্ছে সেখানে— চলছে, বলছে, উঠছে, বসছে ; কত চরিত্রের, কত ঢঙের, কত সাজের মানুষ, গাড়ি, ঘোড়া— কত কী তার ঠিক নেই। মানুষ, জন্তু, কাজ-কর্ম এখানে সবই এক-একটা চরিত্র নিয়ে অবিশ্রাস্ত চলন্ত ছবির মতো চোখের উপরে এসে পড়ত একটার ঘাড়ে আর-একটা । সব ছবিগুলে। নিজেতে নিজে সম্পূর্ণ— ছেদ নেই, ভেদ নেই, টানা ১.লছে চোখের সামনে দিয়ে দৃষ্ঠের একটা অফুরন্ত স্রোত, ঘটনার বিচিত্র অশ্রান্ত লীলা। উত্তরের সারিসারি তিনটে জানলার তলাতে দেড় ফুট করে উচু সরু দাওয়া— সেইখানে বসে খড়খড়ি টেনে দেখি । পুরোপুরি একখান ছবির মতো চোখে পড়ত না। বাড়ি, ঘর, গাছ— এরই নীচে একটা ময়ল। সবুজ টান, তার পর আবার ছবি— ছাগল, মুরগি, হাস, খাটিয়া, বিচালির গাদ, খানিকট চাকার আঁচড়-কাট রাস্ত— তার পর আবার সবুজ টান । এমনি একটা করে খড়খড়ির ফাক আর একটা করে কাঠের পাটী— এরই উপর সব ছবি ও না-ছবিকে দু'ভাগ করে একটা সরু দাড়ি— খবরের কাগজের দুটো কলমেয় মাঝের রেখার মতোই সোজা— যেটা টানলে হয় ছবি, চাপলে হয় বন্ধ ছবি দেখা । So