পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একটা ভয়ংকর আতঙ্কের ছায় পড়ল সবার মুখে-চোখে চলায় বলায় । পিসেমশাইরা ছুটলেন ওষুধ আনতে, ডাক্তার ডাকতে ; নীলমাধববাবু হাকছেন, "বরফ আন, বরফ আন্‌ দাসদাসীরা গুজ, গুজ, ফিসফাল করছে এখানে ওখানে। জ্যৈষ্ঠ মাস ; ঝড়ের মেঘ উঠল কালো হয়ে, শো-শো বাতাস বইল। ভোরের বেলা দাসীরা আমাদের ঠেলে তুলে দিলে, “যা, শেষ দেখা দেখে আয়। নিয়ে গেল আমাদের বাবামশায়ের ঘরে। বিছানায় তিনি ছট্‌ফট্‌ করছেন। পাশ থেকে কে একজন বললেন, "ছেলেদের দেখতে চেয়েছিলে। ছেলেরা এসেছে দেখো ।” শুনে বাবামশায় ঘাড় একটু তুলে একবার তাকালেন আমাদের দিকে, তার পর মুখ ফিরিয়ে নিলেন। মাথা কাত হয়ে পড়ল বালিশে । বড়োপিলিমা ছোটোপিসিমা চেচিয়ে উঠলেন, ‘একি, এ কী হল! কাল-জ্যৈষ্ঠ এল রে, কাল-জ্যৈষ্ঠ।’ সেইদিন থেকে ছেলেবেলাটা যেন ফুরিয়ে গেল। তার পর গেল বেশ কিছুকাল। একদিন বিয়ে হয়ে গেল, সঙ্গে সঙ্গে জীবনের ধরন-ধারণ ওঠাবসা সাজগোজ সব বদলে গেল। এখন উলটাে জামা পরে ধুলোপায়ে ছুটােছুটি করবার দিন চলে গেছে। চাকরবাকররা ছোটোবাবু মশায় বলে ডাকে, দরোয়ানরা ছোটো হুজুর’ বলে সেলাম করে । দু বেলা কাপড় ছাড়া অভ্যেস করতে হল, শিমলের কেঁচানো ধুতি পরে ফিট্‌ফাট হয়ে গাড়ি চড়ে বেড়াতে যেতে হল, একটু-আধটু আতর ল্যাভেণ্ডার গোলাপও মাখতে হল, তাকিয়া ঠেস দিয়ে বসতে হল, গুড়গুড়ি টানতে হল, ড্রেসস্কট বুট এটে থিয়েটার যেতে হল, ডিনার খেতে হল, এক কথায় আমাদের বাড়ির ছোটোবাবু সাজতে হল। বাল্যকালটাতে শিশুমন কী সংগ্রহ করলে তা তো বলে চুকেছি অনেকবার অনেক জায়গায়, অনেকের কাছে। যৌবনকালের যেটুকু সঞ্চয় মন-ভোমরা করে গেছে তার একটু-একটু স্বাদ ধরে দিয়েছি, এখনো দিয়ে চলেছি হাতের আঁক ছবির পর ছবিতে। এ কি বোঝে না ? পদ্মপত্রে জলবিন্দুর মতে সে-সব স্বখের দিন গেল। তার স্বাদ পাও নি কি ওই নামের ছবিতে আমার ? প্রসাধনের বেলায় জোড়াসাকোর বাড়িতে অন্দরমহলে যে সুন্দর মুখ সব, যে ছবি সংগ্রহ २२७