পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাড়ালে মা বসে শোনেন গুপুর বিধবা বউকে কোলের কাছে নিয়ে। ক্ষেত্রনাথ কখকের বলার ধরন চমৎকার, গলাও ছিল সুমিষ্ট। দক্ষিণের বারান্দার গায়ে নাচঘরট। তখন অস্তমিতমহিমা গন্ধর্বনগরের মতো মান শোভা ধারণ করেছে। তারই মধ্যে ক্ষেত্রনাথ কথক মায়ের মনের অবস্থানুযায়ী এক-একটি কথা ভাগবত থেকে বলে চলেছেন, এইভাবে গেল প্রায় এক বছর। তার পর রবিক একদিন পরগনা থেকে ফিরে এসে বললেন, ‘শিৰু কীৰ্তনিয়াকে এনে গান শোনাও। ছোটাে বউঠানের ভালো লাগবে, তোমাদেরও ভালো লাগবে, ওরকম আমি আর শুনি নি। রবিক ডেকে পাঠালেন তাকে, এল শিবু, কীর্তনিয়া । সে যা জমালে। কীর্তনিয়া ছিল বটে, কিন্তু সে ছিল সত্যিই আর্টিস্ট । তার ছবি আছে, দাদা একেছিলেন। মোটাসোটা চেহারা, ভাবছি এই চেহারায় কেমন করে রাখালবালকদের গোষ্ঠলীলা গাইবে । কিন্তু সে যখন ‘ওহে ওহে’ বলে সুর আরম্ভ ক’রে, “আবা আব’ ব’লে রাখালবালক হয়ে গান ধরলে তখন অবাকৃ। অনেক দিন চলেছিল গান, মাথুর থেকৈ আরম্ভ করে সমস্ত কৃষ্ণলীলা শুনিয়েছিল সে । সেই সময় ক্ষেত্রনাথ কথকের ছুটি হয়ে গেল। তিনি বলে গেলেন ‘রবিবাবু এসে আমার জমাট আসরটা ভেঙে দিলেন । আমার কাছ থেকে একটি ছবি তিনি নিয়েছিলেন চেয়ে । •র্তারই বর্ণনামত একেছি পদ্মফুলের উপর দাড়িয়ে বালক কৃষ্ণ । তিনি বলেছিলেন পুজো করবেন । র্তার সঙ্গে সেই ছবি কাশীতে গেল। তার পর তিনি মারা যাবার পর সে ছবি হাত ফিরতে ফিরতে কোথায় গেল জানি নে। সেদিন দেখি কোন এক কাগজে তা ছাপিয়েছে। তার পর একদিন মাও গেলেন । দাদাও গেলেন জোড়াসাকোর বাড়ি শূন্ত করে। ক্রমে ক্রমে আমার দক্ষিণ বারান্দার জলসা বন্ধ হল। লক্ষ্ণৌতে গিয়েছিলুম রবিকার সঙ্গে । গোমতীর উপরে বাদশার আমদরবারের ভগ্নস্তুপে বসে মনে পড়ত আমার দক্ষিণের বারান্দার, আডড । তার পর যখন সত্যিই সেই দক্ষিণের বারান্দ প্রায় ভগ্নস্তুপে পরিণত হয়েছে তখনে মায়া ছাড়তে পারি নি। ভাই বন্ধু সঙ্গী ছাত্র সব চলে গেছে, অতবড়ো খালি বাড়ির সেই দক্ষিণ বারান্দায় এক বসে আমি পুতুল গড়ি, বৈচিত্র্যহীন জীবনে ওইটুকু বৈচিত্র্য আছে তখনো । ૨8 > ծ || ՖՆ